২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ আখ্যা দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কোনো প্রত্যয় এতে প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (২ জুন) বাজেট ঘোষণার পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম এসব কথা বলেন। সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছেন, তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঘোষিত প্রথম বাজেট হলেও নতুন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রত্যয় এতে প্রতিফলিত হয়নি। এটি পূর্ববর্তী বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতায় গতানুগতিক একটি বাজেট।’
মাওলানা মা’ছুম বলেন, ‘এই বাজেটে বড় অঙ্কের ব্যয় নির্বাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরেও এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি, যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, আর বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতির বড় অংশ আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। পরোক্ষ কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির তেমন কোনো উদ্যোগ নেই, যার ফলে সাধারণ মানুষকে বাড়তি করের বোঝা বহন করতে হবে।’
এছাড়া তিনি বলেন, ‘বাজেটে স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে, ফলে দেশীয় উৎপাদন খরচ বাড়বে। এসি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন ও এলইডি পণ্যের দাম বাড়বে, আর সুতার আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তৈরি পোশাক খাতেও ব্যয় বাড়বে, যা রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে কিছু ইতিবাচক দিকের কথাও উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উপকরণ ও কোল্ড স্টোরেজ খরচ কমানোসহ কৃষকদের জন্য কিছু স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মত দেন।
মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ ধরা হলেও এ লক্ষ্য পূরণে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেই বলে মন্তব্য করেন মাওলানা মা’ছুম। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কোনো কার্যকর পরিকল্পনা বাজেটে নেই বলেও সমালোচনা করেন তিনি।
‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা বৈধ অর্থনীতিকে অবমূল্যায়ন করে,’ বলেন তিনি।
শেষে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাজেটকে আরও গণমুখী করে আয়ের ওপর কর কমিয়ে জনকল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। পরবর্তী সময়ে বাজেটের বিস্তারিত পর্যালোচনার ভিত্তিতে দলীয় অবস্থান তুলে ধরা হবে।’