জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৫ টায় রাজধানীর রামপুরায় জুলাই ঘোষণা, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
বিক্ষোভ মিছিলটি রামপুরা কাঁচা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌচাকে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন ও মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতার আসার ব্যাপারে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মূলত, বর্তমান সরকার ১৮ কোটি মানুষের সমর্থনের সরকার। তারা ক্ষমতায় আসার পর সংস্কার ও বিচারের পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই তারা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কতিপয় সংস্কার কমিশন গঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময়ও করেছেন। জামায়াত মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে আন্তরিকতার সাথে সাথে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়েই ঐকমত্য হয়েছে। কিন্তু একটি বড় রাজনৈতিক দল এসব সংস্কারকে সাংবিধানিক বা আইনগত ভিত্তি দিতে চায় না। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার জন্যই রাষ্ট্রীয় সংস্কারগুলোকে সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে হবে।
তিনি অতীতের নির্বাচনের নামে প্রহসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা অতীতের মতো হাসিনা মার্কা নির্বাচন চাই না। নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য।’ তিনি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনের বড় অর্জন। তাই রাষ্ট্রীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে। এর অন্যথা হলে বিপ্লবীরা ঘরে বসে তামাশা দেখবে না। কারণ তারা এখনো ঘরে ফিরে যাননি। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন হলে তারা আবারও রাজপথে নামবে এবং প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায় করেই ছাড়বে। আর এ দাবি কোনোভাবেই পাশ কাটাতে দেওয়া হবে না। এ থেকে কেউ পালানোর সুযোগ পাবেন না।’
তিনি বিদেশি শক্তির দালালদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যেখানেই থাকুক না কেন জনগণ দালালদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনের জনমতের পুরোপুরি প্রতিফলন হয় না। তাই আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিই হতে হবে। তিনি পিআর পদ্ধতি নির্বাচন করার জন্য আরপিও সংশোধন ও গেজেট নোটিফিকেশন জারি করতে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ড. রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সাংবিধানিক সরকার নয় বরং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফসল। তাই এ সরকারকে অবশ্যই আইনি ভিত্তি দিতে হবে। একই সাথে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে সে সনদের ভিত্তিই পিআর পদ্ধতি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না।