পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে অজুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অজু ছাড়া নামাজ পড়লে সেই নামাজ হবে না। আর সুন্দরভাবে অজু করার গুরুত্ব, সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অজু নেই, তার নামাজ হবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৮)
পবিত্র কোরআনে নির্দেশিত আয়াত এবং রাসুল (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী, অজুর চারটি ফরজ নির্ধারিত হয়েছে। এ ফরজগুলো হলো-
মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা
অজুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা। দুই হাতে পানি নিয়ে মুখমণ্ডল ধোয়ার মাধ্যমে মুখের সব জীবাণু দূর হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত মুখে পানি দিতে থাকলে রোগজীবাণু থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব।
কনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিষ্কার করা
হাদিসে রয়েছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুখমণ্ডল পরিষ্কারের পর কনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিষ্কার করেছেন।’ (বুখারি : হাদিস : ১৬৪/১৮৫)।
প্রসঙ্গত, নারীরা গহনা বা আংটি পরে থাকলে, সেগুলো নাড়িয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
মাথা মাসেহ করা
রাসুল (স.) দুইহাত ভিজিয়ে একবার মাথা মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় তিনি দুইহাতের আঙ্গুল এক জায়গায় মিশিয়ে সামনের দিক হতে চুলের ওপর দিয়ে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পেছন থেকে উভয় হাত টেনে সেখান থেকে শুরু করেছিলেন আবার সেখানে নিয়ে যেতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৫)
তারপর হাত ভিজিয়ে দুটি শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে দুই কানের ভেতরের দিকে কানের ভঁজে ভাঁজে ঘোরাতে হবে এবং দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কানের পিঠ অর্থাৎ বাইরের অংশ মাসেহ করতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২১, ১২৩; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০)
টাখনুসহ পা পরিষ্কার করা
হাদিসে এসেছে, ‘ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা হতে গোড়ালি ও টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৬)।
আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘পায়ের আঙুল বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪০৬. ৪০৭)।
অজু করার নিয়ম-
বিসমিল্লাহর সঙ্গে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। তারপর ডান হাতের ওপর তিনবার ও বাঁ হাতের ওপর তিনবার পানি ঢেলে ধুতে হবে। আঙুলের ফাঁকে এমনকি আংটির মাঝেও পানি প্রবেশ করাতে হবে। হাতের তালুতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়ার সঙ্গে কুলি করতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি দিয়ে নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে চেপে তিনবার নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর পুনরায় দুই হাতে পানি ছিটিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে।
পরে বাঁ হাতে পানি নিয়ে ডান বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর ভেজা হাত মাথার ওপরে নিয়ে সামনে থেকে পেছনে এবং পেছন থেকে সামনে মাসেহ বা মোছার কাজ করতে হবে।
এ সময় মনে মনে কলেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। অতঃপর দুই কানে তর্জনী প্রবেশ করিয়ে এবং কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে ও তা আগে পিছে করিয়ে কানের ছিদ্র ও বাইরের অংশ মুছে পরিষ্কার করতে হবে। শেষে বাঁ হাতের তালু দিয়ে ডান পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতের তালু দিয়ে বাঁ পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে।
কোথাও অজুর পানি না পাওয়া গেলে বা অসুস্থতার কারণে কেউ পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে শুকনো মাটি বা বালি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধান শরিয়তে দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :