চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ওয়াহেদপুর এলাকায় দুই বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে। রোববার গভীর রাতে আন্তর্জাতিক পিলার ৭৬ ও ৭৭ এর মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- দুর্লভপুর ইউনিয়নের গাইপাড়া গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রিংকু (২৮) এবং পাঁকা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে মমিন মিয়া (২৯)।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, রোববার রাত ২টার দিকে ৪-৫ জনের একটি দল গরু আনতে সীমান্তের দিকে যায়। এ সময় ভারতের নিমতিতা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা রিন্কু ও মমিনকে আটক করে, অন্যরা পালিয়ে আসে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, আটক দুই বাংলাদেশিকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে এ ঘটনায় বিজিবি জানায়, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ শুনলেও বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনাটি অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে নিহতদের পরিবার থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বিজিবির কাছে জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে বাহিনী।
সম্প্রতি সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার ঘটনা বেড়েছে। গত জুলাইয়ে সংবাদমাধ্যম নিউ এজের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসে কমপক্ষে ৩৪ জন বাংলাদেশিকে গুলি বা নির্যাতনে হত্যা করেছে বিএসএফ।
এর আগের দুই বছরে (২০২৩ ও ২০২৪) নিহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩১ ও ৩০।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসের পরও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এখনো কোনো ফল দেখা যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনার পর সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ–ভারত পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে মানুষ গুলি করে মারা হয়। অন্য কোনো সীমান্তে এমন ঘটে না। এটার কোনো দ্রুত সমাধান আমি দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, চোরাচালান বা অপরাধের অভিযোগ থাকলেও, কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যার অধিকার রাখে না।
সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান মনে করেন, ভারত এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে না এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার কারণেই সীমান্তে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনের মতে, কৌশলগত গুরুত্ব না দেওয়ার ফলেই সীমান্ত হত্যা কমানো সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত ও লাশ উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। বিজিবি জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন