দেশের পূর্বাঞ্চল রেলপথের দ্বিতীয় বৃহত্তর ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া। এ জংশন স্টেশনে অবকাঠামো পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী আন্ত:নগর মেইল লোকাল ট্রেন দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই স্টেশন দিয়ে ভ্রমণ করলেও তাদের ভোগান্তি যেন শেষ নেই। একদিকে স্টেশনের পকেট গেইট বন্ধ, অন্যদিকে মেইন গেইটি রয়েছে মোটরসাইকেলের স্ট্যান্ড। সকাল বিকাল নানা লোকজন মেইন গেইটে যত্রতত্র ভাবে মোটরসাইকেল রাখছেন।
ফলে ট্রেন যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া এই স্টেশনে দৃষ্টি নন্দন করে তৈরী করা হয়েছে প্ল্যাটফর্ম ও ওভারব্রীজ। কিন্তু ওভারব্রীজে ওঠা-নামার জন্য র্যাম্প বা সমতল শিঁড়ি না রাখায় এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যেতে প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ নারী-শিশু যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
যাত্রীরা অভিযোগ করে জানায়, দেশে বিভিন্ন জায়গাতে নতুন তৈরি স্টেশনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল সিঁড়ি রাখা হয়েছে। অথচ এই স্টেশনে নেই। এখানে দ্রুত সমতল সিঁড়ি নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তপেক্ষ কামনা করছেন।
সূত্রে জানা যায়, এ জংশন স্টেশনে ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী ২৪ টি আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রা বিরতী রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে মেইল ও লোকাল ট্রেনের যাত্রাবিরতি। প্রতিদিন ওইসব রেলপথে কয়েক হাজার যাত্রী আন্ত:নগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে ভ্রমণ করছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশনের মেইন গেইটির সামনে যত্রতত্র মোটরসাইকেল রাখা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন নিরাপদে মেইন গেইটের সামনে মোটরসাইকেল রাখছেন।
স্টেশনের দায়িত্বরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রেলওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট লোকজন দেখে ও যেন না দেখার ভান করছেন। বন্ধ রাখা আছে মেইন পকেট গেইটিও, ব্রীজে ওঠা নামা করতে নেই র্যাম্প। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ট্রেন যাত্রীরা।
ট্রেন যাত্রী মো: আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা থেকে মহানগর ট্রেনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আখাউড়ায় আসা হয়। ট্রেন থেকে নেমে মেইন গেইট দিয়ে বের হতে দেখি গেইটের সামনে সারিবদ্ধভাবে মোটরসাইকেল রাখা আছে। মোটরসাইকেলের কারণে খুবই কষ্ট করে বের হতে হয়েছে। পকেট গেইটটি যদি খোলা থাকতো তাহলে এতো কষ্ট হতো না।
আরেক ট্রেন যাত্রী মারুফ আহমেদ বলেন, মেইন গেইটে যত্রতত্র মোটরসাইকেল রাখায় আমারা স্টেশনে প্রবেশ কিংবা বাহির হতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্টেশনের মেইন গেইটে এভাবে মোটরসাইকেল রাখে এটা কোথাও দেখেনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মো: হুমায়ুন মিয়া বলেন, দৃষ্টি নন্দন স্টেশন দেখলে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু যাত্রীদের তেমন সুবিধা হয়নি। আগের থেকে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ যাত্রীরা ইচ্ছে করলে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্ম যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এখানে সমতল শিঁড়ি নেই। সমতল শিঁড়ি রাখা হলে খুব সুবিধা হতো। এখন যে শিঁড়ি করা হয়েছে তা দিয়ে প্রতিবন্ধীদের চলাচল করা সম্ভব না।
তাছাড়া পকেট গেইটি থাকে তালাবন্ধ অবস্থায় আর মেইন গেইটে থাকে মোটরসাইকেল। যাত্রীরা আসা যাওয়া করতে ভোগান্তি বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পকেট গেইটি খোলা রাখা, মেইন গেইট থেকে মোটরসাইলে সরানো ও র্যাম্প নির্মাণের দাবী জানায়।
মো: রিপন মিয়া বলেন, আমি সড়ক বাজার এলাকায় ব্যবসা করি। দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রাখার জায়গা নেই। স্টেশনের মেইন গেইটে রাখা অনেক নিরাপদ। চুরি কিংবা ঝড় বৃষ্টি রোদে চিন্তা করতে হয় না।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন সুপার মো: নুরুন্নবী বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সাময়ীক পকেট গেইট বন্ধ রাখা আছে। মেইন গেইটের সামনে মোটরসাইকেল না রাখতে মাইকিং করে বলা হচ্ছে। ট্রেন যাত্রীদের সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট লোকজন প্রতিনিয়ত কাজ করছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন