ইসলাম কোরবানির চামড়ার ব্যবহার ও বণ্টন সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। অনেকেই জানেন না, এই চামড়া বিক্রি করলে বা এর মূল্য পেলে তা কাদের দেওয়া উচিত। নিচে শরিয়তের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
চামড়া বিক্রির টাকা নিজের জন্য রাখা যাবে কি?
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে টাকা নিজে ব্যবহার করা জায়েজ নয়। এটি সদকা করার মতোই গণ্য।
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোরবানি করল, সে যেন চামড়া বিক্রি করে নিজের প্রয়োজন মেটায় না। (আবু দাউদ, হাদিস- ২৮১২)
অতএব, কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
চামড়া বা এর মূল্য কাদের দেওয়া যাবে?
গরিব ও মিসকিনদের: চামড়ার বিক্রির টাকা গরিব, মিসকিন বা জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের দেওয়া যায়। এটি সদকা হিসেবে গৃহীত হবে।
মাদ্রাসা, এতিমখানা ও দারুল উলুম: বিশ্বস্ত ইসলামি প্রতিষ্ঠান যারা দীন প্রচারে কাজ করে, তাদের দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো- প্রতিষ্ঠানটি যেন চামড়া বা অর্থ দ্বীনের কাজে ব্যয় করে।
কাদের দেওয়া যাবে না?
গরু জবাইকারী (কসাই): চামড়া বা এর মূল্য কসাইয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। হাদিসে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, ‘কোরবানির চামড়া কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে দিও না।’ (সহিহ বুখারি)
আত্মীয়-স্বজন, যাদের প্রয়োজন নেই: যারা মালের দিক থেকে সচ্ছল বা জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত নন, তাদের চামড়ার মূল্য দেওয়া ঠিক নয়।
চামড়া বিক্রি না করে নিজে ব্যবহার করা যাবে?
কোরবানির পশুর চামড়া কেউ যদি বিক্রি না করে ঘরে ব্যবহার করেন (যেমন—জামাদান, জায়নামাজ তৈরি করেন), তাহলে তা বৈধ। এটি নিজের ব্যবহারের জন্য বৈধ। তবে বিক্রির মাধ্যমে নিজের উপকার করা নিষিদ্ধ।
কোরবানির পশুর চামড়া একটি মূল্যবান সম্পদ—যা কেবল গরিবদের হক এবং সদকার মাধ্যম। ইসলাম চায়, সমাজের দরিদ্ররা এই আনন্দে শরিক হোক।
তাই কোরবানির চামড়া বা তার বিক্রির টাকা নিজে ব্যবহার না করে, নির্দিষ্ট শরিয়তী বিধান মেনে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেওয়া একজন মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।