প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবন ও সম্পদের ওপর হঠাৎ আঘাত হানতে পারে। এর মধ্যে ভূমিকম্পকে সবচেয়ে বিধ্বংসী বলা হয়। কারণ এটি প্রায়শই কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটে। অন্যান্য বিপর্যয়ে যেমন বন্যা, ঝড় বা শুক্রপাতের ক্ষেত্রে কিছু পূর্বসতর্কতা পাওয়া যায়, কিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে মুহূর্তের মধ্যে ব্যাপক ধ্বংস হয়। এই কারণে এটি মানুষকে চাঞ্চল্য ও সতর্কতার সঙ্গে প্রভাবিত করে।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূমিকম্প কেবল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। এমন সময় মানুষের কর্তব্য হলো নিজের গুনাহ স্বীকার করে দ্রুত তাওবা করা, আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা এবং বেশি বেশি ইস্তিগফার ও ধর্মীয় স্মরণে মনোনিবেশ করা।
হজরত আলি বিন আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَبَرَّ صَدِيقَهُ وَجَفَا أَبَاهُ وَارْتَفَعَتِ الْأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلُبِسَتِ الْحَرِيرُ وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا’
(তিরমিজি, হাদিস: ২২১০)
অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়:
যখন মানুষের মধ্যে গনিমতের সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানাত লুটের সম্পদে পরিণত হবে, জাকাতকে জরিমানা হিসেবে গণ্য করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে কিন্তু পিতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, মসজিদে শোরগোল তৈরি হবে, সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের লোক সম্প্রদায়ের নেতা হবে, কোনো ব্যক্তিকে তার অনিষ্টের ভয়ে সম্মান দেওয়া হবে, মদপান করা হবে, রেশমি বস্ত্র পরিধান করা হবে, নর্তকী ও গায়িকাদের প্রতিষ্ঠা করা হবে, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে এবং এই উম্মতের শেষ সময়ের লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে—তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু, ভূমিধ্বস বা চেহারা বিকৃতির আজাবের জন্য প্রস্তুত থাকো।
এই হাদিস স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, ভূমিকম্প কেবল প্রাকৃতিক বা ভূগোলগত কারণে ঘটে না। বরং এটি মানুষের গুনাহ, অনৈতিকতা ও সমাজে অন্যায় বৃদ্ধির প্রতিফলন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে প্রেরিত। তাই ভূমিকম্পের সময় মানুষকে উচিত ধৈর্য্য, তাওবা ও আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করা, যাতে তিনি দয়া ও নিরাপত্তা প্রদান করেন।


