বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৪, ১২:২৯ এএম

আমুর প্রধান দুই সহযোগী কিরণ-মেরী লাপাত্তা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৪, ১২:২৯ এএম

আমুর প্রধান দুই সহযোগী কিরণ-মেরী লাপাত্তা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু তিন মাস পর অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তার যাবতীয় দুর্নীতি-অপকর্মের প্রধান দুই সহযোগী ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফখরুল মজিদ কিরণ ও শ্যালিকা মেরী আক্তার। ঝালকাঠি-নলছিটির বাসিন্দারা জানান, কিরণ-মেরীসহ কয়েকজনকে নিয়ে ক্ষমতার বলয় গড়ে তুলেছিলেন আমু। গত ১৫ বছরে আমুর হয়ে ঝালকাঠি-নলছিটিতে সব ধরনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ-বাণিজ্য, অন্যের জমি দখল, কমিটি বাণিজ্য ও নির্বাচনী মনোনয়ন বিক্রি ও চাঁদাবাজি এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমন করতেন কিরণ ও মেরী। এই দুই আত্মীয় থাকতেনও আমুর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায়। তারা দুজনে অবৈধপথে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ভায়রা কিরণ, পালক মেয়ে সুমাইয়া ও শ্যালিকা মেরীর কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত। তাদের দাপটে কেউ মুখ খোলার সাহস পেত না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এরা দুজনই পলাতক।

এদিকে গ্রেপ্তার-রিমান্ডের পর হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছেন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে এক মেয়ের ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে। এই মেয়ে কে ও তার সঙ্গে নিঃসন্তান আমুর কী সম্পর্ক, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল দেখা গেছে।

জানা যায়, এই তরুণীর নাম সুমাইয়া হোসেন। তিনি আমুর মেয়ে হিসেবে পরিচিত। আমুর স্ত্রীরা তিন বোন। ছোট শ্যালিকার কাছ থেকে সুমাইয়াকে দত্তক নেন নি:সন্তান আমু। সুমাইয়া দুবাইপ্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে দুবাইয়ে বসবাস করছেন। আমুর কথিত মেয়ে উচ্চাবিলাসী এই তরুণী ইতিমধ্যে ব্যারিস্টার হয়েছেন। জানা গেছে, আমুর স্ত্রীরা তিন বোন। তার স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। মেরী আক্তারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বোনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। 

ঝালকাঠি-নলছিটিবাসীর অভিযোগ, আমুর অবৈধ পথে আয় করা হাজারো কোটি টাকার বড় অংশই সুমাইয়ার কাছে। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো অবৈধ পন্থায় আয় করা শত শত কোটি টাকা ওই পালক মেয়ের কাছে পাঠিয়েছেন আমু।

জানা গেছে, আমির হোসেন আমুর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন তার ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফখরুল মজিদ কিরণ। তিনি আবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের ভাই। তারও এপিএস ছিলেন কিরণ। আমুর শ্যালিকা মেরী আক্তার ও কিরণ দম্পতির কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক নিয়েছিলেন নিঃসন্তান আমু। এই সুমাইয়া ও কিরনের কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত রাখা। কিরনের বাড়ি ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায়। অভিযোগ রয়েছে, সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনের আপন ছোট ভাই কিরণ তার নিজের এলাকা বাদ দিয়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠি। শুধু সম্পদভাণ্ডার দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি।

এদিকে গত ৬ আগস্ট আমুর ঝালকাঠির বাসভবন থেকে ডলার-ইউরোসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, সাবেক এমপির বাসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আমরা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। টাকা জমা আছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক এমপি হলেও ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের রাজনীতিতেও ছিল তার একক আধিপত্য। প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটিতে তার মনোনীত ব্যক্তিরা স্থান পেয়ে এসেছেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিএনপিপন্থী ব্যক্তিদের বড় পদে বসানোর অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সব টাকাই নগদ দিতে হতো আমুকে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন তার এপিএস কিরণ, যিনি সম্পর্কে আমুর ভায়রা।

নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগের এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো কিরণের। নলছিটির সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি।

ঝালকাঠির একাধিক বাসিন্দা বলেন, ক্ষমতার আমল শুধু নয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও আমু প্রশ্নে নেতিবাচক কিছু বলার সাহস পেত না কেউ। অথচ ঝালকাঠিতে হেন দুর্নীতি নেই, যা করেননি এই নেতা। সব দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে নির্দিষ্ট অঙ্কের পার্সেন্টেজ দিতে হতো তাকে। টিআর, কাবিখা আর সংসদ সদস্যদের নামে বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিতেন টাকা। নলছিটি উপজেলার সরকারি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, আমার বিদ্যালয়ে গত বছর নৈশপ্রহরী, অফিস সহকারী ও আয়া পদে তিনজন লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে আমির হোসেন আমুর নির্ধারিত প্রতিনিধিকে। শুধু আমি নই, সব বিদ্যালয়সহ সব ধরনের নিয়োগেই ছিল একই নিয়ম। আমুর হয়ে টাকা নিতেন কিরণ ও মেরী আক্তার। 

ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যত ধরনের ঠিকাদারি টেন্ডার, সব ক্ষেত্রেই আমুকে দিতে হতো টাকা। ঠিকাদার নির্বচান প্রশ্নেও তার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। কথা না শুনলে শুধু বদলি নয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে হতে হতো হেনস্তা। সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশলী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই অবস্থা। আমুর হয়ে সব স্থানেই দাপট ছিল কিরণ-মেরীর।

আরবি/জেডআর

Link copied!