বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম

শ্রমিক আন্দোলন ঘিরে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম

শ্রমিক আন্দোলন ঘিরে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বছরের শেষদিকে রপ্তানি আয়ের বড় খাত পোশাকশিল্পে দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা ও অসন্তোষ গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার শিল্পাঞ্চলে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গত আগস্টের শেষদিক থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু কারখানা। কারখানা ভাঙচুর-আগুন ও সংঘর্ষে গত সেপ্টেম্বরে এক নারীসহ ২ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছেন শতাধিক পোশাককর্মী। শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা বন্ধে সরকার ও মালিকপক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অস্থিরতা থামছে না কিছুতেই। মাসের পর মাস চেষ্টার পরেও থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। সর্বশেষ শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। ফলে চলতি মাসের (ডিসেম্বর) বেতনের সঙ্গে ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন শ্রমিকরা। সরকার ঘোষিত এ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ১৫ শতাংশ করার দাবিতেও অন্দোলন করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।

অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে শ্রমিকদের পাশাপাশি কিছু কারখানা মালিকও। বেশ কিছু মালিক ব্যবসা করলেও শ্রমিকদের বেতন দিতে গড়িমসি করছেন। আবার ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেও রয়েছে কোন্দল। ফলে অস্থিরতা লেগেই আছে। গার্মেন্টস শ্রমিক, মালিক ও অন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত দিন ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, সেটার নিয়ন্ত্রণ এখন নিতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। রয়েছে শ্রমিকদের কিছু দাবিদাওয়া। এ ছাড়া কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও খুঁজছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা দেশগুলোর ইন্ধনের কথা উঠে আসছে কারো কারো বক্তব্যে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগস্টের শেষদিকে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় পোশাকশিল্পে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। এ ছাড়া অসন্তোষ দেখা দেয় নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে। নির্ধারিত সময়ে বেতন প্রদান, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক, মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভের জেরে অনেক সময় কারখানায় ভাঙচুর, আগুন দেওয়া হয়। কারখানার কর্মকর্তাদের মারধরসহ বিভিন্ন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। আর এ সুযোগে কিছু বহিরাগত কারখানায় লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটান। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। একে একে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু কারখানা। দফায় দফায় বৈঠকে বসে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিসহ নানা পক্ষ। বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যাংক থেকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ ঋণ সুবিধা। সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হয় শ্রমিকদের ১৮ দফা। তারপরও মেলেনি সুফল। বিজয়ের মাসেও শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক কারখানা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের টঙ্গী ও আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে পোশাক শ্রমিকরা। টঙ্গীতে ১১টি কারখানায় ভাঙচুর করে তারা। এতে টঙ্গী ও আশুলিয়ার ৪৬টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে নির্ধারিত সময়ে বেতন দেওয়া, হাজিরা বোনাস বাড়ানো, বার্ষিক পাওনা ছুটি, ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিরিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। বেলা ১১টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বিগবস কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করেন। এরপর র‌্যাব-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ওই দিন শ্রমিক অসন্তোষে গাজীপুরে ২৬টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১১১টি কারখানা বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ।

জানা গেছে, শিল্পাঞ্চলে গত চার মাসে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন-বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ঘটেছে সেপ্টেম্বরে। এ মাসে ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকসহ দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ক্রিমুখী সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১০ জন। চলমান অস্থিরতার জেরে গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ ছিল আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় অবস্থিত ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক কারখানাটি। ওই কারখানাটির শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানাটির সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

একপর্যায়ে শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী রেডিয়েন্স ও সাউদার্ন নামে দুটি পোশাক কারখানায় হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এ নিয়ে রেডিয়েন্স ও সাউদার্নের শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যাসকট গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে ম্যাসকট কারখানার রোকেয়া বেগমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে রোকেয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ সহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকরা নানা দাবিতে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অসন্তোষের জেরে পোশাক শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউসার হোসেন নামে এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। সংঘর্ষকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ৫-৬টি গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

গত ১ অক্টোবর আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের অবরোধে প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঢাকা-আরিচা-নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়ক এবং বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। এ ছাড়া গাজীপুরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন আশুলিয়া থেকে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এ ছাড়া গাজীপুরে ৯টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত ৫ অক্টোবর শ্রমিকদের আন্দোলনে আশুলিয়ায় বহিরাগতদের হামলায় ২০ জন শ্রমিক আহত হন। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। এতে আহত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য। এ সময় শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গত ৯ নভেম্বর থেকে টানা তিন দিন গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই দিন ৩০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার নিয়মিত ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট ঘোষণার পর আন্দোলনে নামেন সাভারের আশুলিয়ার ২৫-৩০টি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। তারা ১৫-২০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে কারখানায় উপস্থিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। একপর্যায়ে এসব কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দিতে বাধ্য হয়।

গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার সকালে গাজীপুরের তারাটেক্স পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ছয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ দিন দুপুরে কারখানায় বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়। এটি দেখে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।

আরবি/জেডআর

Link copied!