বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০১:০০ এএম

ট্রাম্পের ‘নবযুগ’ সূচনার প্রতিশ্রুতি

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০১:০০ এএম

ট্রাম্পের ‘নবযুগ’ সূচনার প্রতিশ্রুতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আবাসন ব্যবসায়ী থেকে রিয়েলিটি শো তারকা। তারপর রাজনীতিতে শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঘা নেতাদের হারিয়ে হলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এরপর দ্বিতীয়বারও হোয়াইট হাউসে ফিরছেন বহু বিতর্কের সঙ্গে ঐতিহাসিকতা নিয়ে। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর আমেরিকায় ‘নবযুগ’ সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস সফরের সঙ্গে মিল নেই তার কোনো পূর্বসূরির। ১৭৮৭ সালের কথাই ধরুন। ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন হলে সমবেত হয়েছেন সদ্য স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের আদি স্থপতিরা। হলের বাইরে গিজগিজ করছে উৎসুক নারী-পুরুষ। নতুন রাষ্ট্র কেমন হবে, এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। একসময় হল থেকে বেরিয়ে এলেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। তাঁকে দেখে ত্রস্ত এক নারী প্রশ্ন করলেন, ‘কী ঠিক হলো ডাক্তারবাবু, প্রজাতন্ত্র না রাজতন্ত্র?’ উত্তরে ফ্রাঙ্কলিন বললেন, ‘প্রজাতন্ত্র, যদি আপনারা তা রক্ষা করতে পারেন’। সেই ঘটনার ২৩৮ বছর পর গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরা বৈশ্বিক রাজনীতি ও নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন রূপ দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনেই শেষ করতে পারবেন, তবে তিনি কীভাবে সেটা করবেন, তা বিস্তারিত বলেননি। তিনি ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, তিনি হয়তো ইউক্রেনকে আঞ্চলিক সমঝোতা করতে চাপ দিতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প ইসরায়েলপন্থি অবস্থান ধরে রাখবেন। তিনি আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের ভিত্তিতে সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করারও চেষ্টা করতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে এশীয় বংশোদ্ভূত যারা: ট্রাম্প প্রশাসনের মন্ত্রিসভায়, হোয়াইট হাউস ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এশীয় বংশোদ্ভূত যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা হলেন-১. শ্রীরাম কৃষ্ণান: ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান উদ্যোক্তা শ্রীরাম কৃষ্ণানকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি মাইক্রোসফট, টুইটার, ইয়াহু এবং ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন ২. কাশ প্যাটেল: কাশ্যপ ‘কাশ’ প্যাটেলকে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক। তিনি নিউইয়র্ক থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক আইনে সনদপ্রাপ্ত ৩. হারমিত কে ধিলোঁ: মানবাধিকারবিষয়ক এই আইনজীবীকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪. উষা চিলুকুরি ভেন্স: উষা চিলুকুরি ভেন্সকে সেকেন্ড লেডি অব আমেরিকা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সের স্ত্রী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা ৫. ডা. জয় ভট্টাচার্য: কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী ডা. জয় ভট্টাচার্যকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পরিচালক পদে মনোনীত করা হয়েছে ৬. বিবেক রামস্বামী: বিবেক রামস্বামীকে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির সর্বোচ্চ পদে বসানো হচ্ছে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত ৭. তুলসি গ্যাবার্ড: সাবেক কংগ্রেসওম্যান। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থী তুলসি গ্যাবার্ডকে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক করা হয়েছে। তিনি হাওয়াই থেকে নির্বাচিত প্রথম হিন্দু কংগ্রেসওম্যান।

ট্রাম্পের সঙ্গে যারা ফিরছেন হোয়াইট হাউসে: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর পরিবারের সদস্যরা হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক কাজে খুব কমই যুক্ত ছিলেন। এবারও এমনটাই দেখা যেতে পারে। তবে পরিবারের কেউ কেউ আগের মেয়াদের মতো এবারও অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে পারেন।

নতুন প্রশাসনে ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, ট্রাম্পের পাঁচজন সন্তান এবং অন্য স্বজনেরা কীভাবে ভূমিকা রাখবেন, সেটা নিয়ে জনমনে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডির দায়িত্ব সামলেছেন মেলানিয়া। দ্বিতীয় মেয়াদেও তাঁর ভূমিকা একই হবে। এবার হোয়াইট হাউসকে নিজের মূল আবাস বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে মেলানিয়ার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তিনি ‘ডন জুনিয়র’ নামেও পরিচিত। বাবার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ প্রচারের অন্যতম রূপকার তিনি।

ট্রাম্প জুনিয়র ‘ট্রিগারড’ শিরোনামের একটি পডকাস্ট চালান। প্রেসিডেন্ট বাবার সবচেয়ে উৎসাহী সমর্থকদের মধ্যে এই পডকাস্টের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, জেডি ভ্যান্সকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প জুনিয়র প্রভাব রেখেছিলেন। ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ বছর বয়সি ট্রাম্প জুনিয়র। জানা গেছে, তিনি এ দায়িত্বে থাকতে চান। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের কোনো দায়িত্ব তিনি নেবেন না।

ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক কিম্বার্লি গুইলফোয়লির সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের বাগ্দান হয়েছিল। তবে তাঁরা বাগ্দান ভেঙে দিয়েছেন। নিজের প্রশাসনে কিম্বার্লিকে গ্রিসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প। বাবার প্রথম মেয়াদে ইভাঙ্কা তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায়ের পর ইভাঙ্কা রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হয়তো দূরেই থাকবেন ইভাঙ্কা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় ছেলে এরিক ট্রাম্প। তাঁর বয়স ৪১ বছর। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। বাবার প্রথম মেয়াদে এরিকও তাঁর বড় ভাইয়ের মতো ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন।

দায়িত্ব নিয়েই ২০০ আদেশে সই, অভিবাসী ঠেকাতেও কঠোর: নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই নানা বিষয়ে প্রায় ২০০টিরও বেশি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই তিনি সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার শুরু করবেন। এর সিকি মাত্রও যদি তিনি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তার ফলে সারা দেশে এবং দেশের বাইরেও অভাবনীয় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, পুরো ব্যাপারটাই বিপজ্জনক। চীন ঠেকাও ধোয়া তুলে ট্রাম্প আমদানি শুল্ক আরোপের যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ তাকেও মস্ত ভুল মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্কের ঢিলটি ছোড়ে, তাহলে চীন যে পাল্টা পাটকেলটি ছুড়বে, তা নিশ্চিত। সে কথার ইঙ্গিত করে ওয়াশিংটনে চীনের মুখপাত্র লিউ পেনগুই বলেছেন, ‘শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধে আমরা কেউই জিতব না’। শুধু বাণিজ্যযুদ্ধই নয়, ট্রাম্প পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড দখলের কথাও ভাবছেন, প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করে।

ট্রাম্পের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ছিল অর্ধনমিত : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দিন দেশটির জাতীয় পতাকা ছিল অর্ধনমিত। আর জো বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট ট্রাম্প। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প চাইলেও দায়িত্ব নেওয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারতেন না।

শপথ অনুষ্ঠানে আয় ২০০ মিলিয়ন ডলার: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জমকালো আয়োজনকে শুধু খরচ নয়, অর্থ সংগ্রহেও কাজে লাগাবেন ব্যবসায়ী ট্রাম্প। প্রতিবারের মতো এ বছর ক্যাপিটল ভবনের বাইরের উদ্যানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়নি। অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ সিদ্ধান্ত। শপথগ্রহণের পরে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে একাধিক ইভেন্ট। যেখানে টিকিটের সর্বোচ্চ দাম রাখা হয়েছে ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ কোটি টাকা। 

ট্রাম্পের পাশাপাশি ওইদিন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন জেডি ভান্স। তাদের দু’জনের সঙ্গেই নৈশভোজ করা যাবে। ওই নৈশভোজে থাকার জন্য পাঁচ ধরনের টিকিটের বন্দোবস্ত রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ডলারের টিকিট ছাড়াও রাখা হয়েছে ৫ লাখ ডলার, আড়াই লাখ ডলার, এক লাখ ডলার এবং ৫০ হাজার ডলারের টিকিট। এ ছাড়া আছে ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা, যেখানে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন ট্রাম্প। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শপথ অনুষ্ঠানের পর যে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য অর্থ সংগ্রহ। এর মাধ্যমে যে অর্থ সংগৃহীত হবে, তা নির্দিষ্ট একটি তহবিলে জমা হবে। জানা গেছে, শুধু এই অনুষ্ঠান থেকেই ২০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৭০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হয়েছে।

২০১৬ সালের নির্বাচন অবৈধভাবে প্রভাবিত করার মামলা ও ৩৪টি অভিযোগের সব প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের মে মাসে দোষী সাব্যস্ত হন ট্রাম্প। এমনই সঙ্কুল পথ পেরিয়ে দ্বিতীয়বারও হোয়াইট হাউসে ফিরলেন ট্রাম্প।

আরবি/জেডআর

Link copied!