ঢাকার বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেল সয়াবিনের সরবরাহ কমেছে। ঢাকার অধিকাংশ দোকানে মিলছে ৫ লিটারের বোতল এবং খোলা তেল। চাহিদা থাকলেও এক লিটার এবং হাফ লিটার বোতলজাত তেলের সররাহ কম বলেন অনেক ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে, আসছে রমজানে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার কমবে। সরকার পতনের পরে দেশে তেল, চিনিসহ সব পণ্যের সরবরাহ বাড়বে। ফলে পণ্যমূল্য কমায় দক্ষিণ এশিয়ায় ১৩ বছরের শীর্ষে থাকা মূল্যস্ফীতির আগুনও কমবে বলে জানিয়েছেন একাধিক আমদানিকারক।
আমদানিকারক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে দেশে তেল-চিনি আমদানি হয়নি। আদানি গ্রুপের ভারত থেকে রূপচাঁদা তেলও এখন আসছে। এস আলমের উৎপাদন বন্ধ, বসুন্ধরার তেলের আমদানি নেই এবং সেনা কল্যাণ সংস্থাও পণ্য আমদানিতে পিছিয়ে রয়েছে।
তারা বলেন, আমদানিতে ছিল শুধু সিটি গ্রুপ এবং টিকে গ্রুপ। পাশাপাশি কিছু ছোট ছোট কোম্পানি তেল-চিনিসহ পণ্য আমদানি করে। সরকার পতনের পরে যারা প্রথম এলসি করেন, সেই পণ্য আসছে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে এবারে পণ্যের শুল্কহার অনেক কমবে। যার কারণে কমবে পণ্যের দামও।
ভোক্তা এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ৫ লিটারের সরবরাহ বেশি এবং ছোট বোতল মিলছে কম। তবে ছোট বোতল নিতে হলে কোম্পানির বাধ্যতামূলকভাবে কিছু পণ্য কিনতে হচ্ছেÑ বলেন তারা।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইেেজর কর্ণধার মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি পণ্যে নির্দিষ্ট মানের তেল দিচ্ছে বলে তারাও জেনেছেন। আমদানি পণ্যে সরকার শুল্কহার কামালেও রমজানের আগে আমদানিকারক কিছু কোম্পানি দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করছেÑ বলেন তারা।
তবে সম্প্রতি দেশে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ‘৫ আগস্টের পরে কোনো তেল-চিনি আমদানি হয়নি, যার কারণে দাম বাড়ে’ বলে দাবি করেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. খালেদ। তিনি বলেন, যারা এলসি করেছে, তাদের পণ্য-তেল এই মাসে বা আগামী মাসে আসবে। নতুন দামে তারা বিক্রি করবেন। তবে চিনি শতকের ঘরে এবং তেল ১৪০ টাকার ঘরে থাকতে পারে। আগামী মাসে দেশে ১২ লাখ টন চিনি আসতে পারেÑ বলেন মো. খালেদ।
অন্যদিকে কিচেন মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ৫ লিটার তেলের দাম ৮৫০ টাকা। তবে বাজারে খোলা তেলের দাম বেশি। বর্তমানে খোলা তেলের লিটার ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা ৫ লিটারের তেলে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে সাধারণ গ্রাহকের আগ্রহ এক লিটার এবং হাফ লিটারের প্রতি।
সরকার শুল্ক অব্যাহতি দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায়। দুই মাস আগে তার প্রভাব পড়েনি, তবে এখন সেই প্রভাব পড়বেÑ বলেন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মীর মামুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছিল। অন্যদিকে ছিল সিন্ডিকেট। তবে এনবিআর আমদানি শুল্ক কমিয়ে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহককে যে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেই সুবিধা এখন পাবেন গ্রাহকরা।
ঢাকায় সাক্ষাৎকালে এ প্রতিবেদককে তিনি আরও বলেন, বিশেষত তেল আমদানি করছে সিটি গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপ। অন্য ছোট কোম্পানিও আনছে, পরিমাণে কম। দুটি গ্রুপই এখন বিশেষ সুবিধা নিচ্ছে এবং দিচ্ছে।
অনেক দোকানি বলছেন, কোম্পানি প্রতিনিধিদের বারবার অর্ডার দিলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম কিছুটা কমেছে।
বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রিমূল্য ৮৫০-৮৫৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি বাড়তি দামে ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মগবাজারের রাজ্জাক স্টোরের মালিক মেহেদি হাসান বলেন, তেল সরবরাহ কমেছে। অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। যে কারণে গ্রাহক তেল চাইলে দিতে পারছি না। এক দফা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। বর্তমানে খোলা তেল ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি করছি।
অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলছেন, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। দাম বৃদ্ধির পর থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে। আমরা চাহিদা অনুসারেই সরবরাহ করতে পারছি। বরং গত সপ্তাহে ব্যারেলপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম এক হাজার টাকার বেশি কমেছে বলে জানি। তবে বোতলজাত তেলে সংকট দেখছি।
গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বেড়ে ১৫৭-১৬০ টাকা হয়। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
সয়াবিন ও পাম তেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সয়াবিন ও পাম তেলের অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ব্যতীত অন্য শুল্ক-করাদি প্রত্যাহার করা হয়। গত অক্টোবরে এমন আদেশ জারি করেছিল এনবিআর। আর ১৬ ডিসেম্বর ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল আমদানিতে আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পাশাপাশি মূসক বা ভ্যাট হ্রাস করে প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি বলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই দাবি করছেন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন