ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। পট-পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারেও এসেছে বেশ পরিবর্তন।
গত বছরের রমজানেও যেখানে নিত্যপণ্যের দাম ছিলো আকাশ-ছোঁয়া। বছর ঘুরতেই সেই বাজারে এসেছে স্বস্তি। প্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম রয়েছে স্থিতিশীল। বিশেষ করে সবজির বাজারে ভোক্তারা অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করছেন।
গত বছর রমজানে উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজের দাম উঠেছিলো কেজিপ্রতি ১২০ টাকা। যা এবার বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়, যা গত রমজানে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
আলুর দামও নেমে এসেছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। চিনি, তেল, ডাল, রসুন, কাঁচামরিচ—সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম এবার তুলনামূলকভাবে কম।
তবে অসাধু কিছু সিন্ডিকেটের কারণে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তি। যেমন লেবু, ঢেঁড়স, বেগুন, পটল, শসা। বিশেষ করে চালের বাজার চড়া।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ‘সরকারের সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করায় বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে সরকার।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনো অস্বচ্ছতা রেখে বাজার অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না।’
                                    
রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুনের দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০, শসা ৫০ থেকে ৬০ ও প্রতি হালি লেবু ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, আলু ২৫ থেকে ৩৫ এবং করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়, দেশি রসুন ১২০, ইন্ডিয়ান রসুন ২৩০ থেকে ২৪০, দেশি মসুর ডাল ১৪০, মুগ ডাল ১৮০, ছোলা ১১০, খেসারির ডাল ১৩০, মিনিকেট চাল ৮২ থেকে ৯০ এবং নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৮ টাকা দরে।
মুরগির বাজারে রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। সোনালি কক মুরগি কেজিপ্রতি ২৭০, সোনালি হাইব্রিড ২৫০, লাল লেয়ার ৩০০, সাদা লেয়ার ২৯০ এবং ব্রয়লার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৫৭০ টাকা।
মাছের বাজারে তেমন বড় পরিবর্তন না থাকলেও ইলিশের দাম রয়েছে একটু বেশি—এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকায়। এ ছাড়া, রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১২০০, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০, কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ও কৈ ২২০, মলা ৫০০, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০, দেশি কই ১২০০ এবং শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৮০, গরুর কলিজা ৭৮০, মাথার মাংস ৪৫০ এবং খাসির মাংস ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায়। ডিমের বাজারে লাল ডিম ডজন প্রতি ১২০, হাঁসের ডিম ২১০ ও দেশি মুরগির ডিম ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এবার অনেক পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে। সরকার যদি আরও গুরুত্ব দিয়ে বাজার মনিটরিং করে তাহলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তি সেগুলো হাতের নাগালে চলে আসবে।’ আরেক ক্রেতা জানান, ‘রমজান উপলক্ষে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। এতে ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও ভোগান্তি বেড়েছে।’
                                    
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান জানান, রমজানে সাধারণ মানুষ যেনো সহনীয় দামে পণ্য হাতে পান তার জন্য সরকারকে আরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে বাজারে পণ্যের দাম আরও কমে যাবে।
জানা গেছে, দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন সময় বাজার অস্থিতিশীল করা সিন্ডিকেটদের তালিকা করছে। এ তালিকায় বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে। এমনকি দেশের বড় মাপের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় রয়েছে।
তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, এ বছর রমজানে নিত্য পণ্যের বাজারে কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে বাজার মনিটরিং জোরদার করলে আরও বেশি সুবিধা পাবেন সাধারণ মানুষ।

 
                             
                                    -20250212113139.webp)

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন