রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

ইরান ঘিরে ভয়ংকর কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ করে আসছে ইসরায়েল। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আরও সরব হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে তেহরানকে ৬০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে কয়েক দফাই বৈঠকও হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময় পার হতেই ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘বিধ্বংসী’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

হামলায় উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তেহরানে। জবাব হিসেবে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে ‘প্রতিশোধ নয়, শাস্তিমূলক’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-এর দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে ইরান।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, তেল ও গ্যাস অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েল। জবাবে হিসেবে ইসরায়েলের হাইফা বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যবস্তু করেছে তেহরান। যদিও উভয় পক্ষই দাবি করছে, তুলনামূলক তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম। তবে এখন অবধি দু’পক্ষই নতি স্বীকার বা যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দেয়নি। বরং যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর করার হুমকি দিচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলো ‘ভয়ংকর বিধ্বংসী’ হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল।

এদিকে গুটি কয়েক পশ্চিমা রাষ্ট্র ছাড়া জি-৭-সহ সিংহভাগ রাষ্ট্রই একতরফাভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন না জানালেও সমরাস্ত্র ও পরোক্ষ মদদ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে একদিন আগেই ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে তিনিও ‘না’ সমর্থন জানিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘যুদ্ধবিরতি নয়, বরং প্রকৃত সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র’।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিকভাবে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমেরিকান স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা হলে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিরোধ্য শক্তির সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাবে।’ তার এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এছাড়াও ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘তেহরানের সব বাসিন্দার উচিত এখনই শহরটি ছেড়ে চলে যাওয়া।’ 

ট্রাম্পের এই পোস্টকে সরলভাবে দেখতে চাইছেন না অনেকেই। পর্যবেক্ষকরা এই বক্তব্যকে বিস্তৃত সামরিক প্রতিক্রিয়ার জন্য ‘উন্মুক্ত আদেশ’ হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাইরের কোনো রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন না তিনি। এখন প্রশ্ন, তার ভেতরের বা তার পছন্দসই রাষ্ট্রগুলো তাহলে কোনগুলো? তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে, তাতে দ্বিধা নেই।

ইরানের তরফ থেকেও যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ কড়াভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, তাদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হবে না। বিনা উসকানিতে তেল আবিবের এই হামলার ফল তাদের ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিশোধ নেওয়ার আগে যুদ্ধবিরতির আলাপ অযৌক্তিক বলে মনে করছে তেহরান।
 
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতি ওয়াশিংটনের ‘দুর্বলতা’ থেকেও যুদ্ধবিরতি হওয়া সহজ হবে বলে না। এর মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েক মাস ধরে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে। এছাড়াও ২৮টি রিফুয়েলিং বিমান একযোগে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করেছে। এই অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েল ঘিরে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা মাথায় রেখেই মার্কিন নৌবাহিনী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। তবে এই পদক্ষেপ, তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে বর্ধিত সংঘাতে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের একটি বাস্তব ভূমিকা, না কি এটি কেবলই কৌশলগত শক্তির প্রদর্শনী- এই প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ইসরায়েলি কট্টর বামপন্থী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ‘মার্কিনি এই সহযোগিতা’কে ‘অভূতপূর্ব’ বলে বর্ণনা করেছে।

এ বিষয়ে কিছু সামরিক সূত্র জানিয়েছে, রিফুয়েলিং বিমানগুলো ফিনল্যান্ডে আসন্ন সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য যেতে পারে। তবে, প্রকৃত উড্ডয়নের পথ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, এদের গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। ফলে উদ্ভুত জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে যে, ওয়াশিংটন তেহরানের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের পরিকল্পনা করছে, অথবা অন্তত কৌশলগত ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে (বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনা) হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

সমর্থন নাকি সরাসরি অংশগ্রহণ?

ইসরায়েলের জন্য লজিস্টিক সহায়তা ও যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্যে এই বিমানগুলোর গতিবিধির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাখ্যা ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মত, সংবেদনশীল ইরানি স্থাপনাগুলোতে নির্ভুল হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এই বিমানগুলো বি-৫২ বা বি-২-এর মতো মার্কিন বোমারু বিমানগুলোকে সহযোগিতা করতে পারে।

তবে কেউ কেউ মনে করছেন, এগুলো শুধু হামলার প্রস্তুতি নয়— বরং মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে সেনা ও সরঞ্জাম পরিবহনের অংশ হিসেবেও ব্যবহার হতে পারে।

আবার অনেকের মতে, এই বিমানগুলো কেবল এই অঞ্চলে হামলার জন্য নয়, হতে পারে উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার বা লজিস্টিক বিমান সহায়তা পরিবহনের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এই ঘাঁটিগুলো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থানে পরিণত হতে পারে।

চীনের অভিযোগ

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বলে প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করেছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ‘ঘি ঢালছেন’ ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আগুন উসকে দেওয়া, ঘি ঢালা, হুমকি দেওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে না, বরং কেবল সংঘাতকে আরও তীব্র ও বিস্তৃত করবে।’

এদিকে খবর চাউর হয়েছে যে, ইরানের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা ক্ষেপণাস্ত্র চালাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই সংঘাতে ওয়াশিংটন সরাসরি সম্পৃক্ত হলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ আবশ্যক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যার ফলে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো প্রকাশ্যে এতে যুক্ত হয়ে যাবে। বিশেষ করে স্থল ও আকাশে বহুজাতিক সামরিক প্রস্তুতির ক্রমবর্ধমান লক্ষণের আলোকে এই আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

পরিস্থিতির অস্পষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটি থেকেই যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধে প্রবেশ থেকে এক ধাপ দূরে? নাকি সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বিশ্ব কেবল কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের সাক্ষী? গোটা পৃথিবীই এখন মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।

Link copied!