দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ডিয়েগো ম্যারাডোনা নাকি লিওনেল মেসি, কে সেরা এই বিতর্ক যেন থামছেই না। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর এই দুই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নিয়ে আলোচনা আরও তুঙ্গে উঠেছে।
১৯৮৬ সালে প্রায় একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো ম্যারাডোনা যেমন দেশটির ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন, তেমনই ৩৬ বছর পর মেসির হাত ধরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
এই দুই মহাতারকার মধ্যে সেরাকে বেছে নিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন অনেক আর্জেন্টাইন। একই রকম দ্বিধায় ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনিও।
তবে শেষ পর্যন্ত দুজনের মধ্যে শিষ্য মেসিকেই বেছে নিয়েছেন এই কোচ। কেন মেসিকে বেছে নিয়েছেন, সেই ব্যাখ্যাও স্প্যানিশ সাংবাদিক ও ইউটিউবার চিরো লোপেজকে দিয়েছেন স্কালোনি।
মেসিকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে স্কালোনি বলেন, ‘আমি লিওর (মেসি) পক্ষেই থাকব। আমি তাকে দেখেছি এবং জানি সে কেমন। আসলে তাদের মধ্যে তুলনা করাটা অর্থহীন।
কারণ, আপনাদের উচিত তাদের খেলা উপভোগ করা। আমি নিশ্চিত, তাদের যে কেউই সত্তরের, আশির বা নব্বইয়ের দশকে খেলতে পারত এবং এই সময়েও খেলতে পারে। কারণ, ভালো খেলোয়াড় সব সময়ই ভালো খেলোয়াড়।’
দলের প্রতি মেসির আত্মনিবেদনের উদাহরণ টেনে স্কালোনি আরও বলেন, ‘সবাই একরকম নয়। ফুটবলের দিক থেকে তারা দুজনই প্রতিভাবান। তবে তাদের ব্যক্তিত্ব আলাদা। তারা দুজনেই নিজেদের মতো করে নেতা।
লিও সেটি অন্যভাবে দেখায়। আমি আপনাদের অনেক উদাহরণ দিতে পারি। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২০২১ কোপা আমেরিকায় তার পেশিতে সমস্যা হচ্ছিল। সে ড্রেসিংরুমে এসে ফিজিওর কাছ থেকে মালিশ করিয়ে নেয়। পরে সে এমনভাবে মাঠে ফিরে যায় যেন কিছুই হয়নি।’
মেসিকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্কালোনি বলেন, ‘চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে কাজ করা সহজ। যখন আপনার দলে এমন খেলোয়াড় থাকে যে পাঁচ বছর বয়স থেকে লড়াই করে আসছে এবং সে জানে কীভাবে জিততে হয়, তখন বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। জেতাটা তার ডিএনএতেই আছে। সে হারতে পছন্দ করে না, এমনকি অনুশীলনেও না, এটাই মূল বিষয়।’
মেসির প্রশংসা করে স্কালোনি আরও বলেন, ‘যখন আপনি তাকে কোনো নির্দেশনা দেন, তখন সে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝে নেয়। আসল কথা হলো তার সঙ্গে অন্য দশজনের মতো আচরণ করা, এটা জেনেও যে সে অন্যরকম।
সে কখনোই দল গঠনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। তার এমন খেলোয়াড়দের প্রয়োজন যারা তার মতোই ভালো খেলে। সৌভাগ্যবশত, আমাদের দলে এমন খেলোয়াড় আছে, যারা দলকে আরও শক্তিশালী করে।’
এরপর স্কালোনি ফিরে যান ১৯৯৩ সালে ম্যারাডোনার নিওয়েলস ক্লাবে যোগ দেওয়ার স্মৃতিতে। তিনি বলেন, ‘তাঁকে স্বাগত জানাতে যুব দলের সবাই মিলে বিখ্যাত সেই পতাকা উন্মোচনের অনুষ্ঠান করেছিল।
একটি ছবি আছে, যেখানে আমি তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের জন্য, তাঁকে অনুশীলন করতে দেখতে যাওয়াটাই ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।
যখনই তিনি অনুশীলন শুরু করতেন, বেলা ভিস্তার পুরো মাঠ যেন থেমে যেত। সবাই চলে যেত তাঁকে দেখতে, বেড়ায় ঝুলে দাঁড়িয়ে থাকত। তিনি শুধু নিওয়েলস নয়, সবার মনে এক অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছেন।’
আপনার মতামত লিখুন :