বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারে বেশ চমৎকার শুরু। ঠিক সেই সময় ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়েন এক সমর্থক, যিনি গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে মিষ্টি হাসিতে একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেছেন।
তাতে লেখা: ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি বিয়ে করব না।’ সাহসিকতার এক নতুন মানদণ্ড যেন!
এরপর যা ঘটল, তা আর কেবল মাঠের খেলা নয় একটি জাতীয় নাটক। আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের এমন পরাজয় যে কেবল ব্যাট-বলের ব্যর্থতা নয়, বরং এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক নাট্যভাবনারই প্রতিফলন।
দল বুঝতে পেরেছে, বিয়ের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকা ঐ সমর্থকের জীবন যেভাবে অনিশ্চয়তায় আটকে আছে, তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। তাই হয়তো মাঠেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই ম্যাচটা হেরে তাকে বাস্তবতায় ফেরাতে হবে। ‘বিশ্বকাপ জিতলে তবে বিয়ে’—এই পণ যেন তার জীবনটা ধ্বংস না করে ফেলে!
এই দায়শূন্য সমর্থন বাংলাদেশ দলের কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাতে তারা এমন এক পরাজয় মঞ্চস্থ করল, যা কেবল স্কোরবোর্ডে লেখা যাবে না, লেখা যাবে ইতিহাসের প্রান্তে।
কেউ বলবে বাজে ফিল্ডিং, কেউ বলবে খারাপ বোলিং, কেউ বা শিশিরকে দোষ দেবে। কিন্তু এসব যুক্তি আসলে বাইরের রূপ। ভেতরের নাট্যকাহিনি ভিন্ন।
ধরা যাক, মুহাম্মদ ওয়াসিম যখন ৬৪ রানে ক্যাচ দিলেন, তখন লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা হৃদয় কি সত্যিই বলটা ধরতে পারলেন না? নাকি সমর্থকের সেই প্ল্যাকার্ড চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল?
আর ১৯তম ওভারে শরীফুল ইসলামের সেই ওভার থ্রো! যেখানে এক রান হলে পাঁচ রান দিয়ে দিলেন! কাকে দোষ দেব? চোখের সামনেই তো ছিল ব্যাকআপ নেই। তাহলে থ্রো কেন? উত্তর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে প্ল্যাকার্ডে।
শেষ ওভারে তানজিম যখন বল হাতে নিয়ে বললেন, ‘আমি ছয়টা ইয়র্কার মারতে পারি, তখনই জানতাম আজ তার হাতে আসবে ফুল টস। শিশির ছিল, বল ফসকে গেছে, কিন্তু সেই ফসকানোটা যেন পরিকল্পিতভাবে নিয়তির খাতায় লেখা।’
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ২ রানের দরকার, ব্যাটসম্যান ঠেলে দিলেন পয়েন্টে, হৃদয়ের হাতে বল আসল। অথচ থ্রো নেই! কেন নেই? ব্যাখ্যা চাইলে উত্তর একটাই বাংলাদেশ জীবন বাঁচিয়েছে, ম্যাচ নয়।
বাংলাদেশ দলের এই মহাত্যাগী হারের পেছনে যে বড় একটা হৃদয় আছে, তা অস্বীকার করা কঠিন। এক সমর্থকের ভবিষ্যৎ, একটি জীবনের সম্ভাবনা সেটার জন্য যদি একটি জয় বিসর্জন দিতে হয়, বাংলাদেশ দল সে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
তবে সেই সমর্থকের উদ্দেশে শেষ কথা একটাই ‘প্ল্যাকার্ড ফেলে দিয়ে বিয়েটা করে ফেলুন। নইলে আপনার বিয়ের ভবিষ্যৎও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের মতোই অনিশ্চিত’।
আপনার মতামত লিখুন :