ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

সভাপতির চেয়ারে বসে পাপনের ‘সাগরচুরি’

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
নাজমুল হাসান পাপন। ছবি- সংগৃহীত

দেশের অন্যতম ধনী ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) গত এক যুগে প্রায় ২,৭৭২ কোটি টাকার ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

২০১২ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, তৎকালীন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ও সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ঘিরে এই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু। 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে একটি বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করেছে এবং ২৭ ধরনের তথ্য চেয়ে বিসিবিকে চিঠি দিয়েছে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে

বল কেনায় ৯২ কোটি টাকা ব্যয়: পাপনের এক যুগে ক্রিকেট বল কেনার মতো ছোট খাতেও ৯২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়েছে।

বোর্ড সভা ও সাধারণ সভায় ১৯ কোটি ও ১১.৫ কোটি টাকা খরচ: শুধু বোর্ড সভা ও সাধারণ সভা আয়োজনেই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে।

বিপিএলের ১১৩ কোটি টাকা গায়েব: দেশের সবচেয়ে জমজমাট ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএলের আয়-ব্যয়ের হিসাবে ১১৩ কোটি টাকার কোনো হদিস মিলছে না।

অডিট রিপোর্টে ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়: এক বছরের ৩৩ পাতার অডিট রিপোর্টের জন্য ৪৬ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক।

মুজিববর্ষের কনসার্টে ২৫ কোটি টাকা লুট: মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টের নামে ২৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

যেখানে শুধু এ আর রহমানকে ৫ কোটি টাকা এবং তার সহশিল্পীদের খাবারের জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

পাপনের ৫২টি বিদেশ সফর: বিসিবি সভাপতি হিসেবে নাজমুল হাসান পাপন ৫২ বার বিদেশ সফর করেছেন এবং প্রতিটি সফরে দৈনিক ভাতা হিসেবে ৪০০ ডলার করে নিয়েছেন।

আইসিসির সভার বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে বোর্ডের অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ আছে। আইসিসির মেগা টুর্নামেন্টের টিকিট কিনতেও তিনি ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।

পূর্বাচল স্টেডিয়াম নির্মাণে অনিয়ম: ৮০০ কোটি টাকা বাজেটের পূর্বাচল স্টেডিয়ামের পরামর্শক ফি বাবদ অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান পপুলাসকে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ১০% ফি (৭৬ কোটি টাকা) দেওয়া হয়েছে।

যেখানে নিয়ম অনুযায়ী ২.৫% হওয়ার কথা ছিল। অপরদিকে কোনো কাজ শুরু না হওয়া সত্ত্বেও ৬০% অর্থ প্রতিষ্ঠানটি তুলে নিয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান চলছে। তিনি জানিয়েছেন, বিসিবি সভাপতি পদ খালি থাকাসহ নানা কারণে কিছু তথ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে, তবে তারা সব নথি সরবরাহের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। 

অন্য উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, অনুসন্ধান শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করা হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এই বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।