ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

আজ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন মুশফিক

জাহিদ হাসান মাহা
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ১০:০৮ এএম
মুশফিকুর রহিম। ছবি: সংগৃহীত

লন্ডনের হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা। ২০০৫ সালের সেই সকালে লর্ডসের বারান্দা জুড়ে যেন জমে থাকা নীরবতা। ঠিক সেই নীরবতার বুক চিরে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিল এক কিশোর—চোখ দুটোতে স্বপ্নের ঝিলিক, পায়ে শঙ্কা, আর হৃদয়ে দুঃসাহসী উত্তেজনার ঢেউ। বয়স তখন মাত্র সাড়ে ১৬। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটও তখন তার শৈশবকাল পার করছে। আর সেই সময়ে দাঁড়িয়ে জন্ম হলো এক নতুন অধ্যায়ের— নাম মুশফিকুর রহিম।

সেদিন লর্ডসের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই কিশোরকে দেখে কেউই হয়তো ভাবতে পারেনি—একদিন ঠিক এই ছেলেটিই দেশের ক্রিকেটকে কঠিন সময়ের কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে দেবেন বারবার। হয়তো ভাবেনি—দুই দশক পরে তার নাম লেখা হবে ইতিহাসের পাতায়, নতুন অধ্যায়ের পাশে, নতুন মাইলফলকের নিচে।

সময়ের পথ বদলেছে। ছেলেটি হয়ে উঠেছে পরিণত যোদ্ধা। আর সেই পথ তাকে ফিরিয়ে এনেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম—তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। এই মিরপুরেই তৈরি হয়েছে তার সবচেয়ে সুন্দর সব ইনিংস, দেখা গেছে সবচেয়ে পরিণত সব ব্যাটিং।

এখানে তিনি কখনো নেতৃত্ব দিয়েছেন, কখনো সমালোচনার ঝড় সামলেছেন, আবার কখনো নীরবে রাত জেগে পরিশ্রম করে প্রমাণ করেছেন—তিনি মি. ডিপেন্ডেবল, বাংলাদেশের ক্রিকেটের নির্ভরতার সবচেয়ে বড় নাম।

আর আজ—১৯ নভেম্বর—এই মিরপুরেই তিনি পা রাখলেন ইতিহাসের দরজায়। খেললেন তার ১০০তম টেস্ট। এটা শুধু একটি ম্যাচ নয়—এটা এক যুগের প্রতিচ্ছবি। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা এবং সহনশীলতার এক মহামানবীয় গল্প।

একটি কিশোরের লর্ডসের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সেই শুরু যেন আজ পরিণত হলো দেশের ক্রিকেটের মহাকাব্যে। যেখানে স্বপ্ন শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের ঠান্ডা সকালের আলোয়, সেই স্বপ্ন আজ পূর্ণ রূপে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের আকাশে।

গ্যালারি গর্জে উঠছে, আলো জ্বলছে, আর মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে মুশফিক বুঝছেন—একজন মানুষের অধ্যবসায় কীভাবে একটি জাতির ক্রিকেট স্বপ্নকে বুকে আগলে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

ব্যাট হাতে মুশফিক দুই দশকের ক্যারিয়ারে ১২টি সেঞ্চুরি, ২৭টি ফিফটি এবং ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মোট রান ৬,৩৫১ এবং ব্যাটিং গড় ৩৮ এর বেশি, যা তাকে দেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।