ফুটবল বিশ্বকাপ যেন এক বিশাল ক্যানভাস, যেখানে একই তুলিতে আঁকা হয় আনন্দ আর বেদনা, সাফল্য আর ব্যর্থতার তীব্র বৈপরীত্য। মঙ্গলবার রাতের ঘটনাপ্রবাহ সেই চিত্রকেই আরও স্পষ্ট করে তুলল।
একদিকে, পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের একমাত্র গোলে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করল।
অন্যদিকে, যুদ্ধের ক্ষত নিয়েও অদম্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিন, যোগ করা সময়ের এক হৃদয়বিদারক পেনাল্টিতে ওমানের কাছে ড্র করে ছিটকে গেল বিশ্বকাপ স্বপ্ন থেকে।
আনচেলত্তির ব্রাজিলের প্রথম জয় ও ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট
সাও পাওলোর করিন্থিয়ান্স অ্যারেনায় রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন। কার্লো আনচেলত্তির অধীনে এটি ব্রাজিলের প্রথম জয় হলেও, এর তাৎপর্য ছিল বিশাল।
এই জয়ের মধ্য দিয়েই তারা ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ফেলেছে। ব্রাজিলই প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট কাটল, যা তাদের ফুটবল ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই।
৯৭ মিনিটের পেনাল্টিতে ফিলিস্তিনের স্বপ্নভঙ্গ
মধ্যপ্রাচ্যে মঞ্চস্থ হলো এক অন্যরকম ফুটবল নাটক। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, ৯৭তম মিনিটে পেনাল্টি হজম করে ১-১ গোলে ড্র করে ফিলিস্তিন।
এই ড্রই তাদের চতুর্থ রাউন্ডে ওঠার সুযোগ ছিনিয়ে নিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের খেলোয়াড়রা ঘরের মাঠে খেলতে না পেরে জর্ডান, কুয়েত ও কাতারের মতো দেশে ঘুরে ঘুরে খেলছে।
সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়েও, শেষ মুহূর্তে এসে এসাম আল-সুবহির স্পট কিকে ওমান নিশ্চিত করল নিজেদের চতুর্থ রাউন্ডের টিকিট, আর ফিলিস্তিনের বুকে বাঁধল একরাশ কষ্ট।
কারা পেলেন ২৬ বিশ্বকাপের টিকিট?
দক্ষিণ আমেরিকা: আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইকুয়েডর।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকা (কনকাকাফ): কানাডা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র (তিন স্বাগতিক দেশ)।
এশিয়া: ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, উজবেকিস্তান।
ওশেনিয়া: নিউজিল্যান্ড।
আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকে এখনো কোনো দল নিশ্চিত হয়নি। তাদের বাছাইপর্ব শেষ হবে যথাক্রমে ১৬ অক্টোবর ও ১৮ নভেম্বর ২০২৫-এ।
বিদায় ঘণ্টা বাজল চিলি-চীনের! লড়াইয়ে এখনো কারা?
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে আলো ছড়ানো দল চিলি (১৯৬২ সালের তৃতীয় স্থানধারী) এবারের আসর থেকে বাদ পড়ে গেছে। একই সঙ্গে ২০০২ সালের পর আর বিশ্বকাপে দেখা না যাওয়া চীনও এবার কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এখনো তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যেসব দল
এশিয়া: কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক ও ওমান—তারা দুটি সরাসরি ও একটি প্লে-অফ জায়গার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
দক্ষিণ আমেরিকা: উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়া—তিনটি কোটা বাকি। পেরুর আশা এখনো টিকে আছে প্লে-অফ ঘিরে।
কনকাকাফ: হন্ডুরাস, বারমুডা, কোস্টারিকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, কুরাকাও, হাইতি, পানামা, নিকারাগুয়া, জ্যামাইকা, গুয়াতেমালা, সুরিনাম, এল সালভাদর—তৃতীয় রাউন্ডে।
এখান থেকে তিনটি দল সরাসরি যাবে, তিনটি দল প্লে-অফ খেলবে। ওশেনিয়া: নিউ ক্যালেডোনিয়া প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্বকাপের উন্মোচন
১১ জুন ২০২৬: উদ্বোধনী ম্যাচ মেক্সিকো সিটিতে।
১৯ জুলাই ২০২৬: ফাইনাল মেটলাইফ স্টেডিয়াম, নিউ জার্সিতে।