ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে ৬ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। একদিকে এই দিনে প্যাট জেনিংসের দলবদল, অন্যদিকে হার্বার্ট চ্যাপম্যান ট্রফির স্মরণীয় ম্যাচের খেলা।
চলুন ফিরে দেখা যাক আজকের দিনে ফুটবলে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত।
প্যাট জেনিংসের বিতর্কিত দলবদল (১৯৭৭)
১৯৭৭ সালের ৬ আগস্ট ইংলিশ ফুটবলে ঘটে এক অবিশ্বাস্য দলবদলের ঘটনা। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে টটেনহ্যাম হটস্পার দলের গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্যাট জেনিংসকে ৩২ বছর বয়সে ক্লাব ছেড়ে দিতে রাজি হয় স্পার্স কর্তৃপক্ষ।
ধারণা করা হয়েছিল, বয়সের কারণে তার সেরা সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সে ধারণা যে কতটা ভুল ছিল, তা প্রমাণ করেন জেনিংস নিজেই।
সে সময়ে ৪৫,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে তিনি যোগ দেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালে, যা বাংলাদেশি টাকায় পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ লাখ টাকার মতো।
পরবর্তী ৮ বছরে তিনি আর্সেনালের হয়ে আরও ২৩৭টি লীগ ম্যাচ খেলেন এবং নিজেকে ক্লাবটির ইতিহাসের অন্যতম সফল গোলরক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
জেনিংসের এই দলবদল ফুটবলবিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলে সে সময়ে এবং বহু টটেনহ্যাম সমর্থক একে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখেন, আবার অনেকে বলেন, ক্লাবই ভুল করেছিল তাকে ছেড়ে দিয়ে।
হাডার্সফিল্ডের শতবর্ষ ও হার্বার্ট চ্যাপম্যান ট্রফি (২০০৮)
প্রায় তিন দশক পর ২০০৮ সালের ৬ আগস্ট ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। হাডার্সফিল্ড টাউন ক্লাব তাদের শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন করে বিশেষ এক ম্যাচ আয়োজনের মাধ্যমে।
প্রতিপক্ষ হিসেবে আমন্ত্রণ পায় আর্সেনাল, আর ম্যাচটির নাম দেওয়া হয় হার্বার্ট চ্যাপম্যান ট্রফি, যিনি উভয় ক্লাবের সোনালি অতীতের রূপকার ছিলেন।
চ্যাপম্যান ১৯২০-এর দশকে হাডার্সফিল্ডকে এবং পরে ১৯৩০-এর দশকে আর্সেনালকে টানা তিনটি করে লীগ শিরোপা জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দেন।
যদিও তিনি প্রতিটি ক্লাবেই হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পুরো সময় ছিলেন না, তবুও তার গড়া দল এবং কৌশল পরবর্তী সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।
গ্যালফার্ম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক এই ম্যাচ দেখতে উপস্থিত ছিলেন ১৯,০৪৪ জন দর্শক। আর্সেনাল ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়ে হার্বার্ট চ্যাপম্যান ট্রফি ঘরে তোলে। ট্রফিটি প্রদান করেন হার্বার্ট চ্যাপম্যানের ভাইপো, কেন চ্যাপম্যান।
একদিকে এক কিংবদন্তি গোলরক্ষকের দলবদল, আরেকদিকে দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের স্মরণীয় পুনর্মিলন—এই দুই ঘটনাই প্রমাণ করে ফুটবল কেবল খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ইতিহাস, আবেগ এবং ঐতিহ্যের এক নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা।