ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ভেটো দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরিবর্তে একটি চুক্তির মাধ্যমে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কার্যক্রম সীমিত করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল মে মাসে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য পিছিয়ে দেওয়া।
সমন্বিত বিমান হামলা ও কমান্ডো অভিযানের চিন্তা-ভাবনার পর ইসরায়েল একটি বিস্তৃত বোমা বর্ষণ অভিযানের প্রস্তাব দেয়, যা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে পারত। ইরানের পাল্টা হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করা এবং তেহরানে সফলভাবে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন তেল আবিবের।
হামলার বিষয়ে কয়েক মাস আলোচনার পরে সামরিক পদক্ষেপ না নিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কেবল অভিযানে অনুমতিই দেবে না, বরং এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে হোয়াইট হাউসে মোটামুটি ঐকমত্যের পর ট্রাম্প এ পরিকল্পনা নাকচ করে দেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ হামলা ইরানের সঙ্গে আরও বড় সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছে। তারা বোমা হামলার মহড়াও দিয়েছে এবং আমেরিকান সাহায্য ছাড়াই তারা কতটা ক্ষতি করতে পারে তার হিসাব-নিকাশও করেছে।
গত বছর এপ্রিল ও অক্টোবরে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এতে এ দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এরপরই ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার জন্য ইসরায়েলের তোড়জোড় আরও বেড়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গত বছরের এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের ওপর হামলার সময় ইরানের বেশিরভাগ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষায় প্রবেশ করতে পারেনি। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ইরানের প্রধান মিত্র লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর সিরিয়াতেও তেহরানের মিত্র প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হয়েছে। এর ফলে ইরান থেকে অস্ত্র চোরাচালানের একটি প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যায়।
পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে ইরান খুব বেশি দূরে নয় বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। বুধবার ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে মন্ডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান রাফায়েল গ্রসি।
এদিকে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে পরবর্তী আলোচনা ১৯ এপ্রিল ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথম দফার আলোচনা এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ওমানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
                                    
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, আলোচনায় সমাধান না হলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হতে পারে। অপরদিকে, ইরানও ক্রমাগত সতর্ক করে আসছে যে, তারা ইউরেনিয়ামের মজুতের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটতে পারে।
ইরান বরাবরই বলে আসছে, পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় তাঁরা। তবে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করছে বলে সন্দেহ হয় পশ্চিমাদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে একটি চুক্তি করতে রাজি হয় তেহরান। ওই চুক্তিতে বলা হয়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সীমিত করবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ চলাকালে আমেরিকা একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পুরনো চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দেন। এ নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলো একাধিকবার আলোচনায় বসলেও তা আর ফলপ্রসূ হয়নি।

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন