স্বামী সন্তানের সঙ্গে প্রমোদ ভ্রমণে গিয়েছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। কিন্তু এই ভ্রমণই যে কাল হবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কলকাতার বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ-র স্ত্রী শর্বরী দেবী গুহ। বন্দুকধারীরেদ গুলিতে স্বামীর মৃত্যু দেখেও কিছুই করতে পারেননি স্ত্রী শর্বরী। ১২ দিন পেড়িয়ে গেলেও এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওই ভয়ঙ্কর ছবি। এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি গত ২২ এপ্রিলের ওই ঘটনায় মানসিক ট্রমা।
রোববার (৪ মে) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সমীর গুহের স্ত্রী শর্বরী দেবী।
তার কথায় স্পষ্ট, ওইদিন ‘সন্ত্রাসী’ হামলা রুখতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাফিলতি ছিল। পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকার নিচেই সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। গুলির শব্দ শুনেও তারা আসেননি বলে অভিযোগ শর্বরী গুহর। আর নির্বিকারভাবে তার স্বামী সমীরকে গুলি করার পর ‘সন্ত্রাসীরা’ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, ‘মোদি কা আদমি হ্যায়’ অর্থাৎ ‘মোদির লোক’।
সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল
শর্বরী দেবীর বলেন, ‘আমরা ভ্যালিতে ঘুরছিলাম, ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ কিছু গুলির শব্দ কানে এলো। আমার স্বামী ওখানের একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? উনি জানালেন, এখানে বাঁদরদের তাড়াতে মাঝেমাঝে শূন্যে গুলি ছোঁড়া হয়। কিন্তু তারপরও গুলির শব্দ চলতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তখন দোকানিরা বলেন, আমরা যেন মাটিতে শুয়ে পড়ি। তারপর তো এসব হয়ে গেল। ওরা (বন্দুকধারীরা) এসে প্রথমে আমাদের বলল, হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যাও। যারা মুসলমান, তারা কলমা পড়ো।’
সমীর গুহের স্ত্রী আরও বলেন, তখন আমাদের পাশেই থাকা মুসলিমরা কলমা পড়তে শুরু করল। তারপর হিন্দুদের বেছে বেছে গুলি চালাল। আমার স্বামীর সামনে একজন এসে গুলি করল। তারপর বলল, ‘মোদি কা আদমি হ্যায়।’ আমি ওই অবস্থাতেও খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, আমার স্বামী যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, ওরা জানল কীভাবে?’
সমীর গুহ ভারত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করতেন। সে কারণেই কি তাকে টার্গেটে পরিণত হতে হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই শর্বরীর। সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দার ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন তিনি। সেই ব্যর্থতারই বলি ২৬টি নিষ্পাপ প্রাণ। বাড়ির একমাত্র কর্মক্ষম সদস্য ছিলেন সমীর গুহ। তাই তার চাকরি দ্রুত পাওয়ার আবেদন করেছেন শর্বরী দেবী।
তবে তার মতে, সেনাবাহিনীর ব্যর্থতায় জন্য এত বড় ঘটনা ঘটে গেছে। শর্বরী দেবী বলেন, ‘সেনাবাহিনী তো পাহাড়ের নিচেই ছিল। ওখানে ক্যাম্প আছে তাদের। এত গুলির শব্দ, তা শুনেও কেউ আসেনি। এটা তো সম্ভব নয় যে তারা গুলির শব্দ শুনতে পাননি।’
৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর থেকে অনেকটাই শান্ত হয়েছে কাশ্মীর। এই কারণে পর্যটকদের ভিড়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল জন্মু-কাশ্মীর। কিন্তু আচমকাই ছন্দ পতন। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এলাকা বলে পরিচিত পেহেলগামেই বন্দুকধারীর হামলায় প্রাণ হারালেন ২৬ জন।