ঢাকা সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫

পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের সীমান্তে নজর ভারতের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত। ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হলেও, ভারতের দুশ্চিন্তা থেমে নেই বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়েও। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদারে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং প্রতিবেশী দেশের ভেতরে পরিবর্তনের ইঙ্গিত ভারতের এই তৎপরতার কারণ।

সীমান্তে বাড়তি নজরদারি ও নতুন ব্যাটালিয়ন

ভারত সরকার বিএসএফের সক্ষমতা আরও বাড়াতে নতুন ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে থাকবেন এক হাজারের বেশি সেনা। সবমিলিয়ে যুক্ত হবেন প্রায় ১৭ হাজার সদস্য। এতে বিএসএফের মোট ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। 

বর্তমানে বাহিনীটির সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার এবং তারা ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তই সবচেয়ে দীর্ঘ- ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার।

এ সীমান্তের অনেক অংশ এখনো সুরক্ষাবেষ্টনীহীন, বিশেষ করে নদী ও বনাঞ্চল পেরিয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোতে। এমন অঞ্চলে পাচার, অনুপ্রবেশ বা সন্ত্রাসী তৎপরতার আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করে বিএসএফ।

নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপন

ভারত সরকার দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ স্থাপন করছে। একটি জম্মুতে এবং অন্যটি মিজোরামে। 

জম্মুর হেডকোয়ার্টার পাকিস্তান সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় বাড়াবে। আর মিজোরামের হেডকোয়ার্টার মূলত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পূর্ব অংশে নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও তীক্ষ্ণ করবে।

বর্তমানে বিএসএফের পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে আসামভিত্তিক হেডকোয়ার্টারের অধীনে রয়েছে শিলচর, আইজল ও মণিপুরের তিনটি সেক্টর। এই নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে।

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ

বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সরকার পরিবর্তনের আশঙ্কায় ভারত চাইছে, সীমান্তের নিরাপত্তা আগেভাগেই জোরদার করতে। 

এই কারণে শুধু পশ্চিম নয়, পূর্ব সীমান্তেও প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে।

সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র, মাদক, মানবপাচারসহ নানা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে জড়িত অনেক আন্তর্জাতিক চক্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। 

তাই ভারতের দৃষ্টিতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এখন শুধু নিরাপত্তা নয়, রাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া

নতুন ইউনিট গঠনের জন্য বিএসএফ পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাপে ধাপে ইউনিটগুলোর কার্যক্রম চালু করা হবে। এই প্রক্রিয়া আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।

কাশ্মীর থেকে কক্সবাজার- উত্তর থেকে দক্ষিণ- ভারত এখন তার সব সীমান্তেই নতুন করে চিন্তা ও প্রস্তুতির পথে। বাংলাদেশ সীমান্ত, যা এতদিন তুলনামূলক শান্ত ছিল, এখন তা-ও ভারতের কৌশলগত হিসাবের অংশ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নির্ভর করছে শুধু সীমান্তের ওপারের দেশগুলোর রাজনীতি নয়, সামগ্রিক দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার ওপরও।

আপনি কি মনে করেন, এই ধরনের প্রস্তুতি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে না, বরং দূরত্বই বাড়াবে?