মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্পে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে জাপান। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে এক ফোনালাপের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের এই পরিকল্পনাটি ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে সম্ভাব্য হামলা থেকে সুরক্ষা দিতে, মহাকাশ-ভিত্তিক প্রযুক্তির সাহায্যে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ধ্বংস করার লক্ষ্য রয়েছে এই প্রকল্পে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে এবং আপডেট করা হবে।
ট্রাম্প চান ২০২৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে তার প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শেষ নাগাদ এই সিস্টেম চালু করতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে, যাতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।
এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক হ্রাস বা বাতিলের আলোচনায় দর কষাকষির একটি কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে।
এই আমেরিকান পরিকল্পনার উদ্দেশ্য চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া থেকে উদ্ভূত হুমকির মোকাবেলা। চীন ও রাশিয়া বর্তমানে বহু ওয়ারহেডবিশিষ্ট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অনিয়মিত পথে চলা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে।
অপরদিকে, উত্তর কোরিয়া একাধিকবার এমন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম।
জাপানও এই দেশগুলোর হুমকির সম্মুখীন এবং মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই সিস্টেমে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ট্র্যাক করার জন্য সেন্সরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এই দিকটিতে জাপান তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে।
২০২২ সালে জাপান তার মূল নিরাপত্তা নীতিমালায় পরিবর্তন এনে ব্যাপকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। জাপানের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা খাতে যৌথভাবে কাজ করা হবে।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে এসএম-৩ ব্লক আইআইএ ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র অন্যতম। ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পে সহযোগিতার ক্ষেত্র শুধুমাত্র সরঞ্জাম নয়, বরং নতুন সিস্টেম উন্নয়নের দিকেও বিস্তৃত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে তিন বছরের মধ্যে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। ট্রাম্প এই খরচের কিছু অংশ বহনে কানাডাকেও আহ্বান জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :