বিগত এক দশক ধরে নানা সংকট, উৎপাদন ত্রুটি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে কোণঠাসা হয়ে থাকা বোয়িং-এর জন্য এটি আরেকটি বড় ধাক্কা। ভারতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তোলে তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। আর সেই আতঙ্কের প্রতিফলন দ্রুত দেখা গেছে শেয়ারবাজারে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতের মধ্যে শেয়ারবাজারে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর প্রায় ৫ শতাংশ কমে যায়। বিমানের এই দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য সময়ের এক কঠিন ধাক্কা।
কারণ, সম্প্রতি নতুন প্রধান নির্বাহী কেলি অরথবার্গ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা ও উৎপাদন ঘাটতি কাটিয়ে বাজারে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছিল। এর মধ্যে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা নতুন করে বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোয়িং এই মুহূর্তে প্যারিস এয়ার শো সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং মে মাসে উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যও অর্জন করেছিল। পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন অর্ডার পেয়েও ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের দুর্ঘটনাটি তাদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দীর্ঘপাল্লার আধুনিক যাত্রীবাহী বিমানের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত এবং এর নিরাপত্তা রেকর্ডও ছিল প্রশংসনীয়। তবে এই দুর্ঘটনা তার দীর্ঘদিনের সুনামকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। এর আগে ২০১৩ সালে কিছু ব্যাটারি সংক্রান্ত সমস্যায় সাময়িকভাবে উড়ান স্থগিত থাকলেও প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনায় বোয়িং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য হাতে পেয়েছে এবং বিস্তারিত তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের আহমেদাবাদে স্মরণকালের এ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের ওই বিমানে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হয়েছেন। বিমানটি আছড়ে পড়ে আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে, যেখানে আরও অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
মোট মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ উদ্ধারকর্মীরা পোড়া বিমানের ধ্বংসাবশেষের ভেতর থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। হতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এখনো আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
নিহতদের মধ্যে আছেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে নিহতদের স্বজনদের নমুনা দিতে আহ্বান জানিয়েছে। বিমানটি যে বিজে মেডিকেল কলেজ–এর ছাত্রাবাসের ওপর আছড়ে পড়ে, সেই ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। টাটা গ্রুপ জানিয়েছে, তারা ওই হোস্টেল ভবনটি নতুন করে নির্মাণ করবে।
এই দুর্ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে এক ব্রিটিশ নাগরিকের বেঁচে ফেরা ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি জানিয়েছে, জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি ব্রিটিশ নাগরিক বিষ্ণু কুমার রমেশ। ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি সামান্য আঘাত পেয়েছেন এবং নিজে হেঁটেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘উড্ডয়নের ত্রিশ সেকেন্ড পরই একটা বিকট শব্দ হয়। তারপরই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেছে।’
বিমানটিতে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, এর মধ্যে ১২ জন ছিলেন ক্রু সদস্য। এয়ার ইন্ডিয়ার বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয় নাগরিক। গত এক দশকে এটিকে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :