শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

নিহত ইরানের দুই সেনাকর্মকর্তাই ছিলেন আমেরিকা-ইসরায়েল বিদ্বেষী

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার হোসেন সালামি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহম্মদ হোসেন বাঘেরি।      ছবি-সংগৃহীত

ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার হোসেন সালামি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহম্মদ হোসেন বাঘেরি। ছবি-সংগৃহীত

ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার হোসেন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান (চিফ অফ স্টাফ) মোহম্মদ হোসেন বাঘেরি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৩ জুন) দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, এই দুই সেনাতকর্তার মধ্যে অনেক মিল ছিল। তারা দু’জনেই ছিলেন আমেরিকার তীব্র সমালোচক ও গোঁড়া ধর্মীয় শাসনের সমর্থক।

১৯৮০ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সালামি এবং বাঘেরি। কেবল সেনাবাহিনীতেই নয়, তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

হোসেন সালামি

হোসেন সালামি ছিলেন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর এক কঠোর কণ্ঠস্বর ও দুর্ধর্ষ কৌশলী। ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় নিহত হওয়া এই জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থান ও তীব্র বাগ্মীতার জন্য বহুল পরিচিত ছিলেন।

১৯৬০ সালে ইরানের ইসফাহান প্রদেশের গোলপায়েগানে জন্মগ্রহণ করেন হোসেন সালামি। ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরুর ঠিক পরেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তার সাহসী নেতৃত্বের কারণে তিনি কারবালা ও ১৪তম ইমাম হুসেন ডিভিশনের কমান্ডার নিযুক্ত হন।

যুদ্ধের পর তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইরানের যৌথ সশস্ত্র বাহিনীর কার্যনির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার এই পদে অবস্থানকালে ইরানের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা কৌশল ও সামরিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

১৯৮০ সালে তিনি আইআরজিসিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হন। ২০২৪ সালে যখন ইরান ইসরায়েলের ওপর সরাসরি সামরিক হামলা চালায়, তখনও তিনি এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। এই সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি আরও বেশি আলোচনায় উঠে আসেন।

হোসেন সালামির ওপর জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিশেষ করে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সালামি থেমে যাননি; বরং রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে তিনি ‘ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা’র বিরুদ্ধে বারবার কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তার এই অবস্থান তাকে ‘কট্টরপন্থী’ অভিধায় চিহ্নিত করে।

মোহাম্মদ হোসেন বাঘেরি

মোহাম্মদ হোসেন বাঘেরি ছিলেন ইরানি প্রতিরোধ ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তিনি শুধু একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নন, বরং ছিলেন একটি আদর্শের ধারক- যিনি চেয়েছিলেন ইরানের ভেতর-বাইরের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে।

১৯৮০ সালে ইরানি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাঘেরি। একই বছরে শুরু হয় ইরান-ইরাক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তিনি সামনের সারিতে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং নিজেকে একজন দুর্দান্ত সৈনিক হিসেবে প্রমাণ করেন। এই যুদ্ধেই তিনি হারান নিজের বড় ভাই হাসান বাঘেরিকে- যিনি ছিলেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সামরিক গোয়েন্দা শাখার প্রতিষ্ঠাতা এবং মাত্র ২৭ বছর বয়সে একটি ডিভিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বাঘেরি গোয়েন্দা কার্যক্রমে যুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে তিনি আইআরজিসির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, যার মধ্যে ছিল- উপ-প্রধান গোয়েন্দা ও অপারেশন প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনীর সাধারণ কার্যক্রমের সমন্বয়ক।

২০১৬ সালে বাঘেরি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান, রিপ্যানিং মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ হাসান ফিরোজাবাদি। তিনি আইআরজিসির অন্তর্ভুক্ত একটি এলিট ফোর্সের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন, যাদের কাজ ছিল স্পর্শকাতর মিশন এবং বিমানঘাঁটিভিত্তিক অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।

মোহাম্মদ বাঘেরি, যিনি মোহাম্মদ হোসেইন আফশোরদি নামেও পরিচিত, ১৯৬০-এর দশকে জন্মগ্রহণ করেন। তার সামরিক জীবন সম্পর্কে বিশদ তথ্য খুব একটা প্রকাশ পায়নি। তবে আইআরজিসির একজন গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বরাবরই আলোচনায় ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে বাঘেরির সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জনসমক্ষে এসেছে। একাডেমিক অর্জন ও সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, বিশেষ করে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর নজরে তিনি ছিলেন একজন ‘বিতর্কিত’ কিন্তু ‘কৌশলী’ ব্যক্তি।

তিনি ছিলেন আমেরিকা-বিরোধী অবস্থানের একজন দৃঢ় প্রবক্তা। তার কণ্ঠস্বর ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে বারবার প্রতিবাদের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

Link copied!