ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

ফোর্ডো গুড়িয়ে দিতে ব্যবহার হবে কী মার্কিনি ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ১০:০১ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ইরানের গভীরে ভূগর্ভে স্থাপিত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসে সক্ষম একমাত্র প্রচলিত অস্ত্র হচ্ছে মার্কিন ‘বাঙ্কার-ব্লাস্টার’ বোমা। যা একটি অতি শক্তিশালী বিশ্বের মধ্যে এই মুহূর্তে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে এই বোমার ব্যবহারই নাকি অন্যতম একটি কাজ এবং এটিই হবে তাদের পছন্দীয়।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত রাখা, তথাপি ‘ত্রিশ হাজার পাউন্ড’ ওজনের এই ভয়ঙ্কর বোমাটি বর্তমানে ইসরায়েলের অস্ত্রাগার থেকে নেই হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

কেন এই বোমার প্রয়োজন?

গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানি সামরিক কমান্ডারদের হত্যা করেছে এবং বহু ভূপৃষ্ঠের স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি করেছে, যা নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রতিরক্ষা ও গণতন্ত্র ফাউন্ডেশন’-এর ইরান বিষয়ক পরিচালক বেহনাম বেন তালেবলু জানিয়েছে, ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ, উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা, সামরিক ঘাঁটি, গবেষণাগার, বিজ্ঞানী, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এসব হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল অবকাঠামোতে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে তা এখনও অনিশ্চিত।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তেহরানের দক্ষিণে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ‘ফোর্ডো’তে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ফোর্ডো ভূগর্ভে গভীরভাবে স্থাপিত হওয়ায় সেটি ইসরায়েলি হামলার নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। যা নাতানজ ও ইসফাহান সাইটের মতো নয়। 

এমন পরিস্তিতিতে তালেবলু ভাবছে, এখন আমেরিকা-ইসরায়েলের নজর ফোর্ডোর দিকে, যা প্রায় তিনশ ফুট পাথরের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে।

সাবেক মার্কিন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও প্রতিরক্ষা গবেষক মার্ক শোয়ার্জ বলেন, এ ধরনের স্থাপনা ধ্বংসে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত অস্ত্রের সক্ষমতাই রয়েছে।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এতে পারমাণবিক নয় বরং প্রচলিত ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমা ব্যবহারের সমাধান আসবে।

‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমার ক্ষমতা কী?

মার্কিন সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমা যাকে বিশাল শক্তিধর অনুপ্রবেশকারী বলা হয়। এটি বিস্ফোরণের আগে প্রায় ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাথর ও কংক্রিট ভেদ করতে পারে।

সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা যেখানে কাছাকাছি বা তলায় আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়, এই বোমার বিশেষ নকশা লক্ষ্যবস্তুর গভীরে ঢুকে তারপর বিস্ফোরণের জন্য তৈরি।

ওয়াশিংটনের কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ মাসাও ডাহলগ্রেন বলেন, ‘এ ধরনের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের জন্য ইস্পাতের অত্যন্ত শক্ত আবরণযুক্ত বোমার প্রয়োজন হয়, যা পাথরের স্তর ভেদ করে ভেতরে পৌঁছাতে পারে।’

৬ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ এই বোমাটিতে রয়েছে বিশেষ ফিউজ, যাতে অত্যধিক ধাক্কা বা চাপের মধ্যেও তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ না ঘটে।

‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ নকশার কাজ শুরু হয় ২০০০ সালের শুরুর দিকে এবং ২০০৯ সালে বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে বিশটি বোমার অর্ডার দেওয়া হয়।

‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ কীভাবে মোতায়েন করা হয়?

এই বোমা মোতায়েনের জন্য একমাত্র সক্ষম বিমান হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি আধুনিক গোপনীয় যুদ্ধবিমান, যেটি এই ধরনের ভারী অস্ত্র বহনে সক্ষম।

প্ল্যানেট ল্যাবস-এর উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই যুদ্ধবিমানগুলো গত মে মাসের শুরুতে ভারত মহাসাগরের একটি ঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল, তবে জুনের মাঝামাঝি নাগাদ তা আর সেখানে দেখা যায়নি।

দূরপাল্লার এই বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকেই উড্ডয়ন করে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে গিয়ে হামলা চালাতে পারে, পূর্বেও এ ধরনের মিশন সম্পন্ন করেছে।

প্রত্যেকটি বিমান দুটি করে এই বোমা বহন করতে পারে। তবে গবেষক শোয়ার্জের মতে, এ ধরনের লক্ষ্যবস্তুকে সম্পূর্ণ ধ্বংসে একাধিক বোমা ব্যবহার করতে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তা এই বিমানগুলোর ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।

ফোর্ডার পরিণতি কী?

এই ধরনের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের দায় সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন তালেবলু। তার মতে, বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমাই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মোকাবিলার একমাত্র পথ নয়।

কূটনৈতিক সমাধানের পথ উন্মুক্ত না থাকলে, ইসরায়েল ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে আঘাত হানতে পারে এই ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’।

ফোর্ডা হামলার জন্য  দেশটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং অন্যান্য কাঠামোগত ব্যবস্থা নিতে পারে। নাতানজে এরই মধ্যে এমন হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে।