ইরানের পরমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে গত ১৩ জুন ইসরায়েল এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে সরাসরি হামলা চালায়। ইসরায়েলের অভিযানে ইরানের সামরিক ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের ফারদো, ইস্ফাহান ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে।
টানা ১২ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধ শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে। তবে এই পুরো সংঘাতের সময়জুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ খোলাখুলিভাবে জানিয়েছিলেন, আমরা খামেনিকে সরাসরি হত্যা করতে চাই।
চ্যানেল থার্টিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাটজ আরও বলেছিলেন, ‘আমরা তাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগটি আসেনি। খামেনি আগেভাগেই গভীর ভূগর্ভস্থ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।’
এদিকে শুক্রবার (২৮ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি খামেনিকে অত্যন্ত জঘন্য ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম, তবে তিনি ধন্যবাদটুকুও দিলেন না।’
পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘সংঘাত চলাকালীন তিনি জানতেন খামেনি কোথায় অবস্থান করছেন এবং তাকে হত্যার একটি যৌথ মার্কিন-ইসরায়েলি পরিকল্পনাও রুখে দিয়েছেন।’
এদিকে যুদ্ধবিরতির পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার জবাবে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আমেরিকার মুখে চড় মেরেছে ইরান।’
তিনি আরও বলেন, ইরান এই যুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ও কৌশলগত জয়’ পেয়েছে।
এর আগে ট্রাম্পের খামেনিকে নিয়ে মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যদি সত্যিই ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি চান, তাহলে আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা বন্ধ করতে হবে এবং তার কোটি কোটি অনুসারীর অনুভূতির প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনিকে হত্যা করা হলে শুধু ইরান নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে পড়ত। এই হত্যাকাণ্ড ইরানে শোকের পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূচনা করত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয়ার পরিবেশ তৈরি হতো।
আপনার মতামত লিখুন :