পাকিস্তানে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে এক পর্যটক পরিবারের সবাই রয়েছেন, যারা নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়ার আগে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধারের অপেক্ষায় ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলে। সোয়াত নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়া একটি পরিবারকে ছোট এক জমির টুকরোয় আটকে থাকতে দেখা যায়, যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, পরিবারটি এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু কেউ আসেনি। এ নিয়ে প্রাদেশিক সরকারের ওপর ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত ৩৬ ঘণ্টায় এই বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। এর মধ্যে ১৬ জনই শিশু। পাঞ্জাব প্রদেশে মারা গেছে ১৩ জন, আর বাকি ১৯ জন খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে, যেখানে ওই পর্যটক পরিবারটির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ক্ষমতাসীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াকাস আকরাম জানিয়েছেন, সোয়াতের চারজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুর এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
সতর্কতা জারি সত্ত্বেও দুর্ঘটনা
ওয়াকাস আকরাম দ্য গার্ডিয়ান–কে বলেন, ‘২১ জুন আমরা আকস্মিক বন্যা নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলাম। তারপরই আমরা সতর্কতা জারি করি এবং মসজিদগুলো থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যাতে মানুষ নদীর তীর থেকে সরে যায়।’
তিনি আরও জানান, সতর্কতা উপেক্ষা করে নদীর ধারে যাওয়ার অভিযোগে অন্তত ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় আকস্মিক বন্যার সময় পাঞ্জাব প্রদেশের একটি পরিবার নদীর ধারে বসে পিকনিক করছিল। সেই সময় তারা ছবি তুলছিল, আর তখনই নদীতে পানি বাড়তে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিবারের কিছু সদস্য নদীতে নামেন শিশুদের উদ্ধার করতে, কিন্তু তীব্র স্রোতে তারাও ভেসে যান।
পিটিআই নেতা শেখ ওয়াকাস আকরাম জানিয়েছেন, সোয়াত নদীতে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১৭ জন মানুষ ভেসে গেছেন। এর মধ্যে পিকনিকে আসা পরিবারের ৯ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, একজন এখনও নিখোঁজ। এছাড়া আরও চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং তিনজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে।
এই ঘটনার পর প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) একটি সতর্কতা জারি করে জানায়, নদীতে পানির মাত্রা অনেক বেশি এবং সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিতে পাকিস্তান
পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৪ কোটির বেশি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। ২০২২ সালে জলবায়ুজনিত ভয়াবহ বন্যায় অন্তত এক হাজার ৭০০ জন মারা যায় এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সোয়াতের সাম্প্রতিক ঘটনাটি জলবায়ু সংকট, পর্যটকদের অসচেতনতা, প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তুতির অভাব এবং দুর্বল উদ্ধার ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। এটি স্থানীয় সরকারের অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগও সামনে এনেছে।
আপনার মতামত লিখুন :