বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পার্সটুডে

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম

লিওয়ের কসাই থেকে গাজার কসাই: অপরাধীদের রক্ষা করাই আমেরিকার ইতিহাস

পার্সটুডে

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সময়টা ১৯৮৭ সালের জুলাই মাস। ‘লিওয়ের কসাই’ খ্যাত নাৎসি যুদ্ধাপরাধী ক্লাউস বার্বিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ফরাসি আদালত। সাব্যস্ত করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের দোষে।

লিও শহরে জার্মানির নাৎসি গুপ্ত পুলিশের (গেস্টাপো) প্রধান ছিলেন বার্বি। কমপক্ষে ৭ হাজার ৫০০ ফরাসিকে মৃত্যু শিবিরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৪ হাজার জনকে দিয়েছিলেন মৃত্যুদণ্ড। লিওয়ের কসাই প্রায় দুই বছর ধরে জার্মানিতে আমেরিকার গোপন এজেন্ট ছিলেন এবং ওয়াশিংটন তাকে আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরণের সহযোগিতা দিয়েছিল।

ফরাসি প্রতিরোধ ধ্বংস করার জন্য ‘লিওয়ের কসাই’ খ্যাত ক্লাউস বার্বিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বর্বরতার জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন। কখনো কখনো নিজেই বন্দিদের ওপর চালাতেন বর্বর নির্যাতন, কার্যকর করতেন মৃত্যুদণ্ড। বিভিন্ন সূত্র মতে, লিওয়ের এই ‘কসাই’ ফরাসি প্রতিরোধের নেতা জিন মোলিনকে গ্রেপ্তারের পর নিজেই তাকে নির্যাতন ও লাথি-গুতা মেরে হত্যা করেছিলেন।

যুদ্ধের শেষে তিনি জার্মানিতে ফিরে আসেন ও হিটলারের পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিজের অপকর্ম সংক্রান্ত সব নথি ধ্বংস করে ফেলেন। ধারণ করেন ভিন্ন নাম ও পরিচয়, সূচনা ঘটনা নতুন জীবনের।

যুদ্ধের পরে লিওয়ের ‘কসাই’কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজে লাগাতে শুরু করে। কমিউনিস্ট নেটওয়ার্কগুলোর বিষয়ে তথ্যদাতা হিসেবে নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর তাকে দেয় নিরাপত্তা। জার্মানির মার্কিন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মিথ্যা পরিচয়ে বসবাসের সুযোগও দেয়।

১৯৫১ সালে বার্বিকে দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে বিচার থেকে বাঁচতে হয়। তিনি বলিভিয়ায় কয়েক দশক ধরে প্রকাশ্যে বসবাস করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে ফ্রান্স তাকে ফেরত আনতে সক্ষম হয় এবং ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে বার্বিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম বার্বিকে ‘লিওয়ের কসাই’ বলে অভিহিত করে এবং ফরাসি আদালত তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে (তখন ফরাসি আইন মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়েছিল) দণ্ডিত করে। লিওয়ের কসাইয়ের বয়স তখন ৭৩ বছর। এরপর ১৯৯১ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাগারেই ছিলেন তিনি।

‘লিওয়ের কসাই’-এর বিচারকে আন্তর্জাতিক আইনে গুরুতর অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমেরিকা পরবর্তীতে সেই খুনিকে নিয়োগ ও রক্ষার কথা স্বীকার করেছে এবং এজন্য ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু এমন অন্যায় কি ক্ষমার যোগ্য?

এবার গাজার কসাইয়ের দিকে নজর দেওয়া যাক

লিওয়ের কসাইয়ের বিচারের এত বছর পর মার্কিন সমর্থনে আরেকজন কসাই আবির্ভূত হয়েছে ভিন্ন নামে, ভিন্ন উপাধিতে এবং ভিন্ন স্থানে। এই কসাই আর কেউ নন,  তিনি হলেন ইহুদিবাদী ‘ইসরায়েলে’র প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার কসাইয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাজায় মানুষ হত্যা করছে, নেতানিয়াহুর বাহিনীকে অস্ত্র দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক ফোরামে দখলদার ‘ইসরায়েলে’র বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাব ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। ইদানিং দাবি করছে যে, তারা দখলদার ‘ইসরায়েল’কে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দিচ্ছে।

‘ইসরায়লে’র কসাই নেতানিয়াহু শুধুমাত্র ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ৫৬ হাজারের ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। আহত করেছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২ জন ফিলিস্তিনিকে। নিহতদের মধ্যে আবার টার্গেট করে খুন করেছেন গাজায় অনুষ্ঠিত নির্মম গণহত্যার তথ্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সাংবাদিকদেরর। গণহত্যার পর গণহত্যা চালানো নেতানিয়াহুর নেশায় পরিণত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও ‘গাজার কসাই’ এখনও গাজার ধ্বংসস্তূপে রক্তের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত মানুষ জড়ো করে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। এ পর্যন্ত শত শত ত্রাণপ্রার্থীকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। 

গত মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ‘ইসরায়েল’ মিলে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নামে ত্রাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে সীমিত পরিমাণে কিছু ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। এটা এক ভয়াবহ মৃত্যু ফাঁদ। কিছু খাবার দেওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত মানুষকে ডেকে এনে হত্যা করা হচ্ছে। একটি বড় মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে এই ত্রাণ কেন্দ্র।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা যারা সাহায্য নিতে জড়ো হন, কসাইয়ের নির্দেশে তাদের ওপর দখলদার বাহিনী গুলি চালায়। ফলে কেউ দৌড়ে পালায়, কেউ গুলিবিদ্ধ হয়, কেউ মারা যায়। কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে পালায়, কেউ হয়তো বন্ধু বা অপরিচিত মানুষের সাহায্যে বাঁচে, আর কেউ একাকী রক্তে ভিজে মাটিতে পড়ে থাকে।

মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত সাহায্য কেন্দ্রে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৫০০-র বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি গাজাবাসী। তাদের কম খরচে হত্যা করতে ত্রাণ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে জায়নবাদীরা। এর আগেই তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইউএনআরডব্লিউএ’র মতো বিশ্বস্ত সংস্থার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কসাই বাহিনী।

বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে, ‘গাজার কসাই’ খ্যাত নেতানিয়াহুর বিচার দেখার জন্য। আসলেই কি এই কসাইয়ের বিচার হবে নাকি ওয়াশিংটনের সহায়তায় গাজায় গণহত্যা চলতেই থাকবে?

Shera Lather
Link copied!