ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখেও তেলআবিব থেকে যুদ্ধ থামানোর কোনও ইঙ্গিত নেই। একাধিকবার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থতিতে প্রশ্ন উঠছে— ইসরায়েল কেন গাজার যুদ্ধবিরতি চায় না?
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি, রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হিসেবে দেখে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ, মানবিক সংকট ও অর্থনৈতিক খরচ বাড়তে থাকলে তাদের এই অবস্থান টিকিয়ে রাখা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে পড়বে।
হামাস নির্মূলের লক্ষ্য
ইসরায়েল সরকার যুদ্ধের শুরুতেই ঘোষণা দেয়, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হামাসকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করা। যুদ্ধবিরতি হলে হামাসের গোপন বাংকারগুলো পুনরায় সক্রিয় হতে পারে, নেতৃত্ব পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। ইসরায়েল মনে করে, এখন থামা মানেই অসমাপ্ত কাজ রেখে ফেরা। যা ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে দেশীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চাপের মুখে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, বিচার বিভাগ সংস্কারবিরোধী আন্দোলন ও অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ দানা বেঁধেছে বহুদিন ধরে। যুদ্ধই এখন তাকে রক্ষা করছে রাজনৈতিকভাবে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতীক হতে পেরেছেন এবং সরকারের সমালোচনাকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে দমন করতে পারছেন। যুদ্ধবিরতি হলে তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
মানবিক বিরতির ফাঁদ
যুদ্ধবিরতির অর্থ শুধু গোলাগুলি বন্ধ নয়। এটি মানবিক সহায়তার প্রবেশ, গণমাধ্যমের নজর, এবং হামাসের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ফেরানোর সুযোগ। ইসরায়েল বিশ্বাস করে, এমন বিরতি হামাসের জন্য উপকারি এবং তাদের মোকাবিলায় ইসরায়েলের অবস্থান দুর্বল করে দিতে পারে। তাই তারা বারবার ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতি’তে আপত্তি জানিয়েছে বা তা স্বল্প মেয়াদে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
জিম্মি ইস্যুতে কৌশলগত বিভাজন
হামাসের হাতে বহু ইসরায়েলি জিম্মি থাকলেও, তাদের মুক্তির চুক্তিতে পৌঁছানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, যুদ্ধবিরতি হলে জিম্মি ইস্যুতে চাপে পড়ে যাবে তারা, আর হামাস সেই চাপকে ব্যবহার করে আরও রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করবে।
গাজার পুনর্গঠন নিয়ে নিয়ন্ত্রণের লড়াই
ইসরায়েল চায় না, যুদ্ধ শেষে হামাস আবার গাজা শাসনের বৈধতা পাক। তারা চাচ্ছে মিশর, সৌদি আরব বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজায় নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠুক। যুদ্ধবিরতি হলে হামাস আবার জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে পারে, যা ইসরায়েলের কৌশলের পরিপন্থী।
আন্তর্জাতিক চাপও সীমিত
পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সংকটে উদ্বিগ্ন হলেও, তারা এখনও ইসরায়েলের হামাসবিরোধী অবস্থানকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেনি। এই অনুকূল কূটনৈতিক আবহ ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ‘সুবিধাজনক জায়গা’ দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :