২ মাসের ব্যবধানে আবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। চলতি সপ্তাহেই তিনি দেশটিতে সফর করবেন। মার্কিন সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং কৌশলগত আলোচনার লক্ষ্যেই এই সফর হতে যাচ্ছে, যা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য দুশ্চিন্তাই বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এর আগে চলতি বছরের জুনে ওয়াশিংটন সফরকালে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন আসিম মুনির। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাধারণত এ ধরনের মধ্যাহ্নভোজে শুধু কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। কিন্তু একজন সেনাপ্রধানের জন্য এই আমন্ত্রণ কূটনৈতিক ও সামরিক মহলে ‘অভূতপূর্ব সম্মান’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই সফরের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। মাত্র এক মাস আগেই মার্কিন সেনাবাহিনী তথা সেন্টকম প্রধান জেনারেল কুরিলা মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অসাধারণ অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেন। এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ওয়াশিংটনের চোখে ইসলামাবাদ এখনো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বিশেষ করে আফগানিস্তান পরিস্থিতি, চীন-ভারত প্রতিযোগিতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তানের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে।
পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের মাসখানেক সময়ের ব্যবধানে দুবার যুক্তরাষ্ট্র সফর অবশ্যই ভারতের নীতিনির্ধারকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, একসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আমার বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেও সেই সম্পর্কের মুখে ছাই দিয়ে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প কৃতিত্ব দাবি করার পর মূলত এই দূরত্ব স্পষ্ট হতে শুরু করে। পাকিস্তান ট্রাম্পের দাবির প্রতি সম্মতি জানালেও ভারত অস্বীকার করে যে, এখানে ট্রাম্প কোনো অবদান রেখেছেন। এই অবস্থায় ভারতের চির শত্রু পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানের ওয়াশিংটন সফর অবশ্যই নয়াদিল্লিতে বাড়তি দুশ্চিন্তার মেঘ জমা করবে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বিদেশ সফর ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মধ্যেই পাকিস্তানে এক ধরনের রাজনৈতিক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যেন আসিম মুনির রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে যাচ্ছেন। তবে এই গুজব সজোরে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দ্য ইকোনমিস্টে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট হবেন—এমন কথাবার্তা নেহাতই নিরর্থক।’
আপনার মতামত লিখুন :