‘ইসরায়েল’ পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তবে শাসন করতে চায় না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ‘ইসরায়েলি’ মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এর ঠিক আগেই ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন নেতানিয়াহু। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাই আমাদের নিরাপত্তার জন্য, হামাসকে নির্মূল করতে এবং এমন একটি বেসামরিক প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে চাই যারা ‘ইসরায়েল’ ধ্বংসের পক্ষপাতী নয়।”
তিনি আরও বলেন, “‘ইসরায়েল’ গাজায় নিরাপত্তা বেষ্টনী চায় এবং চায় আরব বাহিনী সেখানে প্রশাসন চালাক। আমরা ওখানে শাসন করতে চাই না।”
নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ঘনিয়ে এসেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭ জনে, যার মধ্যে ৯৬ জন শিশু।
আলজাজিরার সাংবাদিক হোদা আবদেল-হামিদ বলেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য ‘ইসরায়েলি’ গণমাধ্যমে প্রচারিত ‘গাজা পুরোপুরি দখল’-সংশ্লিষ্ট বার্তার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকার, যার পেছনে কূটনৈতিক বার্তা থাকতে পারে।’
গত কয়েকদিন ধরে ‘ইসরায়েলি’ সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়েছে, নেতানিয়াহু এমন একটি পরিকল্পনা আনতে যাচ্ছেন যার আওতায় গাজায় নতুন করে সেনা অভিযান জোরদার করা হবে, এমনকি সেসব এলাকায়ও যেখানে ‘ইসরায়েলি’ বন্দিরা আটকে আছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ‘ইসরায়েল’র সেনাপ্রধান ইয়াল জামির গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনার বিপক্ষে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘প্রধান সেনা কর্মকর্তার মত প্রকাশের অধিকার আছে, কিন্তু সেনাবাহিনীকে সরকারের চূড়ান্ত নীতিকে শ্রদ্ধা করতেই হবে।’
‘ইসরায়েলি’ পত্রিকা হারেৎজ-এর বিশ্লেষক গিদেওন লেভি নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছেন, গাজার শাসনভারের জন্য অন্য কোনো বাহিনী খোঁজার ভাবনা ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন’। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘কে গাজায় ঢুকবে? ‘ইসরায়েলি’ সেনা ছাড়া আর কেউ কি রাজি হবে সেখানে শাসন করতে?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধের প্রকৃত লক্ষ্য হলো জাতিগত নির্মূল। মানুষদের একটি তথাকথিত মানবিক জোনে ঠেলে দিয়ে, পরে তাদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :