অবশেষে দীর্ঘ চার দশক ধরে চলে আসা সংঘাত নিরসনে এক শান্তিচুক্তিতে সই করেছেন আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে হোয়াইট হাউসে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান চুক্তি স্বাক্ষরের পর করমর্দন করেন। ‘এই দিনটি আসতে অনেক অনেক বছর সময় লেগেছে’ মন্তব্য করে এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার শান্তিচুক্তি শেষে ট্রাম্প বলেন, দুই দেশ সব ধরনের যুদ্ধ ‘চিরতরে’ বন্ধ রাখতে এবং ভ্রমণ, ব্যবসা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবহন রুট পুনরায় চালু হবে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়বে বলেও জানান তিনি।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন, ‘আমরা আজ ককেশাস অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছি। যুদ্ধ, দখল ও রক্তপাত নিয়ে ব্যস্ত থেকে আমরা অনেক বছর অতিক্রম করেছি।’ আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান এই চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেন।
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা মাথাচাড়া দেয়। ট্রাম্পের মতে, ‘পঁয়ত্রিশ বছর তারা যুদ্ধ করেছে, আর এখন তারা বন্ধু এবং অনেক দিন ধরে বন্ধু থাকবে।’
এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আজারবাইজান ও তার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নাকশিভানকে সংযুক্ত করতে একটি নতুন পরিবহন করিডর নির্মাণে সহায়তা করবে। এই রুটটির নামকরণ করা হবে ‘ট্রাম্প রুট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’।
নাকশিভান আজারবাইজান থেকে আর্মেনিয়ার ভূখণ্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন। পূর্বে আজারবাইজান এই অঞ্চল পর্যন্ত রেল করিডরের দাবি জানিয়েছিল, আর আর্মেনিয়া এর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিল, যা নিয়ে আগের শান্তি আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল। অথচ মাত্র ছয় মাসে ট্রাম্প এক বিস্ময়কর কাজ করে ফেলেছেন বলে আলিয়েভ জানান।
চুক্তির আওতায়, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গে জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য আলাদা দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করেছে। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে একাধিক যুদ্ধরত দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। শুক্রবারের এই বৈঠক রাশিয়ার দীর্ঘকালীন প্রভাবাধীন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেয়।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়াই প্রধান ক্ষমতা ও মধ্যস্থতাকারী ছিল। সর্বশেষ শান্তিচুক্তি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্যোগে হয়েছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্পের নেতৃত্বে চুক্তি হওয়ায় রাশিয়া কার্যত প্রান্তে চলে গেছে। পূর্বের রুশ প্রস্তাব উভয় পক্ষ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। চুক্তির ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে যখন ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে তিনি আগামী সপ্তাহে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :