রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম

মিডল ইস্ট আই-এর বিশ্লেষণ

গাজায় কতজন ইসরায়েলি বন্দি ছিল, তাদের কী হয়েছিল?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম

বন্দি নাগরিক। ছবি- সংগৃহীত

বন্দি নাগরিক। ছবি- সংগৃহীত

গত সোমবার, ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে হামাস সর্বশেষ ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে বন্দি হওয়া ইসরায়েলিদের ভাগ্য দীর্ঘ সময় অনিশ্চিত ছিল। এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের জন্যও এক ভয়াবহ বাস্তবতা সামনে আনে। গাজায় গণহত্যার আগে ইসরায়েলের কারাগারে ৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি ছিল। যুদ্ধের পর এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দেখায়—এই সংঘাত কেবল সামরিক নয়, বরং একটি গভীর মানবিক সংকটও।

এই যুদ্ধ দুই পক্ষের জন্যই শুধু অস্ত্রের লড়াই নয়, এটি নৈতিক, মানবিক এবং সামাজিক স্তরেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। বন্দিত্ব এখানে একটি করুণ বাস্তবতা—যা দুটি সমাজের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে অপহরণ করা হয়। সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলার সূচনা হয়, যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে রূপ নেয়। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে যুদ্ধের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল—বন্দিদের মুক্তি। কিন্তু যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হয়, ততই এই মানবিক লক্ষ্য পিছনে পড়ে যায়। ইসরায়েলের প্রাক্তন সেনাপ্রধান গাদি আইজেনকোট স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধে বন্দিদের ফেরানোর কথা কোথাও নেই। এই যুদ্ধ আরও গভীর।’ এ বক্তব্য যুদ্ধের প্রকৃত অগ্রাধিকারকে সামনে আনে—যেখানে রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থই মুখ্য, আর মানবাধিকার দ্বিতীয় স্তরে চলে যায়।

হামলার আগেই গাজায় চারজন ইসরায়েলি বন্দি ছিলেন—দুই মৃত সৈন্য (হাদার গোল্ডিন ও ওরন শাউল) এবং দুই বেসামরিক নাগরিক (আভেরা মেঙ্গিস্তু ও হিশাম আল-সায়েদ)। ৭ অক্টোবরের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৫ জনে। এর মধ্যে ১৬৮ জনকে মুক্ত করা হয় (যুদ্ধবিরতি বা অভিযানের মাধ্যমে), ৮৭ জন নিহত হন এবং ২৮ জনের মৃতদেহ যুদ্ধ শেষে গাজায় রয়ে যায়।

এই সংখ্যাগুলো দেখায়, বন্দিদের জীবন সরাসরি যুদ্ধের তীব্রতা ও সামরিক কৌশলের ওপর নির্ভরশীল। এটি গভীর মানবিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়—যেখানে মানুষ কেবল একটি কৌশলের অংশ হয়ে ওঠে।

২৫৫ জন বন্দির মধ্যে ছিল ১৫৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইসরায়েলি নাগরিক—৯১ জন পুরুষ ও ৬২ জন নারী। তাদের মধ্যে ৯০ জন জীবিত ফিরে আসে এবং ৬৩ জন নিহত হন। বন্দিদের মধ্যে ৪০ জন শিশু ছিল, এদের মধ্যে ৩৮ জনকে জীবিত মুক্ত করা হয়।

হামাস ৩৪ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করেছিল, এর মধ্যে পাঁচজন নিহত হন। সৈন্যদের মধ্যে ৩১ জনকে আটক করা হয়, এর মধ্যে ১১ জন জীবিত ফিরে আসে। হামাসের কাছে আটক শিশু ও বিদেশি নাগরিকদের এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার উদ্বেগ উত্থাপন করে। যুদ্ধের এই প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক প্রশ্ন তোলে।

গত দুই বছরের ব্যবধানে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে তিনটি বড় বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৩৪ জন ইসরায়েলি ও ১ জন নেপালি নাগরিক মুক্তি পেয়েছে—এর মধ্যে ১২৩ জন জীবিত এবং ১১ জন মৃত। হামাস প্রতীকীভাবে ২৯ জন বিদেশি নাগরিক এবং ৬ জন দ্বৈত নাগরিকত্বধারী ইসরায়েলিকে (তিন মার্কিন, তিন রুশ) মুক্তি দেয়। এ ছাড়া মানবিক কারণে আরও ৩৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় (২৪ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর ২০২৩) ৭৮ জন বেসামরিক বন্দি মুক্তি পেয়েছিল। দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতিতে (১৯ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ ২০২৫) ৩৩ জন মুক্তি পায়, এর মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ চুক্তিতে ইসরায়েলের ২০ জন জীবিত বন্দি মুক্তি পায়। এই বিনিময়গুলো দেখায়, বন্দি জীবনের মান কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থের ওপর নির্ভর করছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আশ্চর্যজনক হলেও, বাস্তবে এটি যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

হামাসের কাছে আটক থাকা ২৫১ জন বন্দির মধ্যে ৮৭ জন নিহত হন। ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস বন্দিদের হত্যা করেছে, আবার হামাস বলছে, ইসরায়েলি বিমান হামলাতেই বন্দিরা প্রাণ হারিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেশ কিছু বন্দি উদ্ধার করেছে, কিন্তু সেই অভিযানে অনেক বন্দি মারা গিয়েছে।

বিশেষভাবে, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি অভিযানে চারজন বেসামরিক বন্দিকে মুক্ত করতে গিয়ে ২৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এই বাস্তবতা দেখায়, বন্দি জীবন রাজনৈতিক ও সামরিক খেলায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে এবং এর মানবিক মূল্য ভয়াবহ।

ফিলিস্তিনে হামলার প্রথম দিনেই ইসরায়েলি সেনারা ‘হ্যানিবল নির্দেশিকা’ প্রয়োগ করে। এর নির্দেশ ছিল—যদি অপহরণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে গুলি চালাতে হবে, এমনকি বন্দিদের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকলেও। এই নির্দেশিকার ফলে কয়েকজন বন্দি, যারা আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন, ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন। এটি যুদ্ধনীতি এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের ব্যবহৃত সুড়ঙ্গগুলোতে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করতে শুরু করে। এসব গ্যাস ব্যবহারের ফলে অনেক বন্দি মারা যান। এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনজন বন্দি মারা যান একই পন্থায়। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরও ছয়জন নিহত হন। এসব মৃতের দেহে কার্বন মনোক্সাইডের চিহ্ন ছিল, তবে অনেকের শরীরে গুলির চিহ্নও পাওয়া গেছে।

এদিকে, এই পন্থায় আগস্ট ২০২৪-এ রাফাহতে ছয়জন বন্দির মৃত্যু আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটি হামাসের জন্য একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে ইসরায়েলের তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, বন্দিদের মুক্তি, মৃত্যু এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। বন্দিদের পরিবার ও সাধারণ জনগণের এই ক্ষোভ ইসরায়েলি রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এটি প্রমাণ করে, যুদ্ধ কেবল সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়—এটি মানুষের মানসিক ও সামাজিক জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে।

Link copied!