ভারতের আকাশ দীপাবলির আলোয় ঝলমল করলেও উৎসবের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তের ওপারেও। তবে ভিন্ন রূপে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বিশেষ করে রাজধানী লাহোরে দীপাবলির পর বাতাস ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে। বায়ুর মান এতটাই খারাপ হয়েছে যে, মরিয়ম নওয়াজের নেতৃত্বাধীন প্রাদেশিক সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
করাচি-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দূষণের জন্য স্থানীয় নির্গমন, ভারতের দিক থেকে আসা দূষণকারী পদার্থ, দীপাবলির আতশবাজি এবং কম গতির বাতাস সব কিছুর সম্মিলনকেই দায়ী করছেন।
পাঞ্জাবের পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগ (ইপিডি) জানিয়েছে, নয়াদিল্লি ও ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোর বায়ুদূষণও পাকিস্তানের পাঞ্জাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত লাহোরের বায়ুর মান সূচক (একিউআই) নেমে এসেছে ২৬৬-এ, যা এটিকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক দূষিত শহরে পরিণত করেছে। শীর্ষে রয়েছে নয়াদিল্লি। একই সময়ে দিল্লির একিউআই ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
দূষণ মোকাবিলায় লাহোরে জরুরি ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান সরকার। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অ্যান্টি-স্মগ গান ও পানি ছিটানো অভিযান শুরু হয়েছে। এতে নয়টি সরকারি বিভাগ অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ ধোঁয়াশা প্রতিক্রিয়া দল গঠন করা হয়েছে, যারা দূষণ ছড়ানো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মাত্র ৪ থেকে ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার গতিবেগে ভারতের দিক থেকে আসা ধোঁয়াবাহিত কণাগুলো সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে লাহোর, ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, শাহীওয়াল ও মুলতান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় লাহোর ছিল বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর, একিউআই ছিল ১৮২। শীর্ষে ছিল কলকাতা (২০৩) ও নয়াদিল্লি (২১৩)। আজ মঙ্গলবার সকালে লাহোরের একিউআই আরও বেড়ে ২৬৬ ছুঁয়েছে। সুইস বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার জানিয়েছে, শহরে পিএম২.৫ কণার ঘনত্ব ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম/মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সীমার ৩৭ গুণ বেশি।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের পরিস্থিতিকে ‘আন্তঃসীমান্ত পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘অমৃতসর, লুধিয়ানা ও হরিয়ানা থেকে আসা বাতাসে দূষণ লাহোরে প্রবেশ করছে। একিউআই ২১০ থেকে ২৩০ এর মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ ঘোষণা করেছেন, খোলা জায়গায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, প্রধান সড়কে যান চলাচল সীমিত করা এবং ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন জব্দ বা জরিমানা করা হবে।
এদিকে লাহোর পুলিশ ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে টায়ার ও বর্জ্য পোড়ানো এবং অবৈধ নির্গমনের অভিযোগ রয়েছে।
সীমান্তের ওপারে ভারতের নয়াদিল্লিতেও বায়ুদূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। বেশিরভাগ এলাকায় পিএম২.৫-এর ঘনত্ব ২৪৮ মাইক্রোগ্রাম/মিটার ছাড়িয়ে গেছে। আদালতের নির্দেশে আতশবাজি ‘সবুজ পটকা’য় সীমিত রাখার কথা থাকলেও, বাস্তবে তার প্রভাব ছিল সামান্য। অর্থাৎ রাতজুড়ে বিস্ফোরণের আলোয় ঝলমল করেছে শহর। উৎসবের উজ্জ্বলতা ম্লান হতেই দীপাবলির আলো মিলিয়ে গেছে এক ঘন দীর্ঘস্থায়ী ধোঁয়াশায়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন