বাণিজ্যিক ও সামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের ছক কষছে চীন। আফ্রিকায় বন্দর উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি ও বন্দর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকা চীনা উপস্থিতিতে শুধু মহাদেশটিতেই নয়, পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষিত হচ্ছে।
বন্দর উন্নয়নে চীন
আফ্রিকার ৭২টি দেশের ৭৮টি বন্দর নির্মাণ, অর্থায়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে চীন। পূর্ব আফ্রিকার ১৭টি দেশের ৩৫টি বন্দর, দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি ও উত্তরাঞ্চলের ১১টি বন্দর এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আফ্রিকার মোট ২৩১টি বাণিজ্যিক বন্দরের এক-তৃতীয়াংশের বেশি চীনা পোর্ট ডেভেলপমেন্টের আওতায় রয়েছে।
চীন ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৪৬টি দেশে ৭৮টি বন্দরে ১২৩টি প্রকল্পে ২৯.৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই বন্দরের অবকাঠামো চীনা নৌবাহিনী প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে, কারণ চীনা আইন অনুযায়ী বেসামরিক বন্দরগুলোকে নৌবাহিনীর লজিস্টিক সহায়তা দিতে বাধ্য।
সামরিক উপস্থিতি: প্রথম নৌঘাঁটি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০১৭ সালে চীন আফ্রিকার জিবুতিতে তার প্রথম বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। বেইজিং দাবি করে, এটি শান্তিরক্ষা ও মানবিক সহায়তায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে, তবে বিশেষজ্ঞরা এটিকে বৈদেশিক সামরিক ঘাটি স্থাপন বলে ব্যাখ্যা করছে।
আগামী পাঁচ বছরে আটটি নতুন নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে চীন। এই ঘাঁটিগুলো আফ্রিকা, ইন্দো-প্যাসিফিক, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত বন্দরগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে চীনের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী হবে।
আফ্রিকায় চীনের অবকাঠামোগত সহযোগিতা
২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, চীন আফ্রিকায় ১৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথ, ১ লাখ কিলোমিটার মহাসড়ক, ১ হাজার সেতু, ১০০টি বন্দর, ৮০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১৩০টি চিকিৎসাকেন্দ্র, ৪৫টি স্টেডিয়াম ও ১৭০টি স্কুল নির্মাণে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া, ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ৪৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
চীন আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠেছে এবং ২০২১ সালে টোগো, জিবুতি ও রুয়ান্ডাসহ ৯৮% করযোগ্য আইটেমের ওপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা দিয়েছে।
চীনের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সমালোচনা
চীন আফ্রিকায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কৌশল অনুসরণ করছে, যার মাধ্যমে ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে চীনের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।
তবে, চীনের ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে আফ্রিকার কিছু দেশ উদ্বিগ্ন। অনেক দেশ চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে। তবে, চীন তার ঋণ মওকুফ করতে রাজি হয়নি এবং অনেক ক্ষেত্রে তার কর্মীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংরক্ষণ করেছে, যা আফ্রিকার দেশগুলোর কিছু অংশে অসন্তোষের কারণ হয়েছে।
চীনের উপস্থিতি আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই নিয়ে আসছে।