পেহেলগামে ঘটে যাওয়া হামলার পর সীমান্তে সংঘাতে জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। মে মাসের মধ্যে বিমান হামলা, ড্রোন হামলা ও মিসাইল চালানো হয় দুই পক্ষ থেকেই।
এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। অবশেষে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা সরাসরি দুই দেশের সেনাপ্রধানদের আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হয়।
তবে এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই অস্থায়ী শান্তির আড়ালে আবারও বড় সংঘর্ষের শঙ্কা রয়েছে।
অতীতের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মোট চারবার সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধ হয়। এরপর ১৯৬৫ সালে আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে বড় সংঘর্ষ ঘটে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভারত।
সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ হয়, যা ছিল সীমান্তে পাহাড়ি এলাকায় একটি সীমিত কিন্তু প্রাণঘাতী যুদ্ধ।
তবে প্রতিটি যুদ্ধেই কাশ্মীর ছিল কেন্দ্রীয় ইস্যু।
আবার কেন সংঘর্ষ?
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালায়। ভারতের দাবি, এই অভিযানে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানা হয়।
অভিযানে ব্যবহৃত হয় মিসাইল, রাফায়েল যুদ্ধবিমান ও উন্নত প্রযুক্তি। ভারত দাবি করে, এতে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয় এবং জৈশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠরা মারা যায়।
জবাবে, পাকিস্তান ভারতীয় শহরগুলোতে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়। ভারতের অমৃতসরসহ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়। এই হামলার জবাবে ভারত প্রথমবারের মতো তাদের এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে। পাকিস্তানের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
আকাশপথে মুখোমুখি সংঘর্ষ
এ ৪ দিনের যুদ্ধে দুদেশের আকাশে ১২৫টির বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। এটি উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বিমান সংঘর্ষ। ভারত রাফায়েল ও সুখোই যুদ্ধবিমান হারায়, আর পাকিস্তানও কিছু ড্রোন হারিয়েছে বলে জানায়।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসেই নয়, বরং বিশ্ব সামরিক ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই সংঘাতকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন ‘বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ড্রোন যুদ্ধ’।
যুদ্ধ থামলো কীভাবে?
দীর্ঘদিনের বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও, ১০ মে ভারত-পাকিস্তানের মাঝে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ মধ্যস্থতার চেষ্টা করে, ভারত জানায় এটি ছিল দুই দেশের সেনাপ্রধানদের সরাসরি যোগাযোগের ফল।
তবে এ যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়েই মূল অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
কাশ্মীর নিয়ে আগুন নিভছে না
আগে থেকেই কাশ্মীর ইস্যু দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিবাদের উৎস। ২০১৯ সালে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
পাকিস্তান কাশ্মীরকে একটি ‘আন্তর্জাতিক বিরোধপূর্ণ এলাকা’ বললেও, ভারত একে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে।
অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে কাশ্মীর সীমান্তের মানুষরা আছে বিপাকে।
জলযুদ্ধের আশঙ্কা
পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো জলবণ্টন।
১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান ৬টি নদীর জল ভাগ করে নেয়। তবে ভারত যদি এই চুক্তির আওতায় নিজের অধিকার অনুযায়ী জল ব্যবহারে কঠোর হয়, তাহলে পাকিস্তানের কৃষি ও পানীয় জলের সরবরাহে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এটি একটি ‘নীরব অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হলেও সোমবার (১২ মে) শুধুমাত্র চেনাব নদীর পানি ছাড়ে। তাতেও বন্যার সঙ্কটের মুখে পরেছে পাকিস্তান।
ভবিষ্যত আশঙ্কা
বর্তমানে দুই দেশেই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে তা উভয় দেশের জন্য ভয়াবহ হবে, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে। তাই অনেকে মনে করেন, বড় ধরণের যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তবে, সীমান্ত সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
যুদ্ধ নয়, শান্তিই দুই দেশের মানুষের চাওয়া। কিন্তু কাশ্মীর, জঙ্গি হামলা ও জলবণ্টন ইস্যু যতদিন অমীমাংসিত থাকবে, ততদিন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কখনও স্বাভাবিক হবে না।
ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়- আবারও কী যুদ্ধে জড়াবে পাকিস্তান-ভারত?