ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

মুখোমুখি থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া: সামরিক শক্তিতে কারা এগিয়ে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক সংঘর্ষ তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে বিশ্ব অঙ্গনে। ছবি- সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিতর্কিত সীমান্তে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে বিশ্ব অঙ্গনে। এ নিয়ে আরও সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সংঘাতের মধ্যেই আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইআইএসএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনীর শক্তি ও প্রস্তুতি নিয়ে একটি তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা, বাজেট, প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এবং বাহিনীর একটি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী অন্যতম বৃহৎ এবং সুসংগঠিত। দেশটির সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি এবং ২০২৪ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাই বাহিনীর অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে প্রায় ৪০০টি ব্যাটল ট্যাংক, ১ হাজার ২০০টির বেশি সাঁজোয়া যান এবং ২ হাজার ৬০০টিরও বেশি আর্টিলারি অস্ত্র। এ ছাড়াও দেশটির রয়েছে যাত্রীবাহী বিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোনসহ একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবহর।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট অনেক ছোট—মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার। দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০০। ১৯৯৩ সালে কম্বোডিয়ার সাবেক কমিউনিস্ট বাহিনী ও দুটি প্রতিরোধ বাহিনী একত্রিত হয়ে বর্তমান সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী সবচেয়ে বড়, যেখানে প্রায় ৭৫ হাজার সৈন্য রয়েছে। তাদের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে ২০০টির বেশি ব্যাটল ট্যাংক এবং ৪৮০টি আর্টিলারি অস্ত্র।

বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রেও থাইল্যান্ড অনেক বেশি আধুনিক। দেশটির বিমানবাহিনীতে কর্মরত প্রায় ৪৬ হাজার সদস্য রয়েছে এবং এতে ২৮টি এফ-১৬ ফাইটার জেট ও ১১টি সুইডিশ গ্রিপেনসহ মোট ১১২টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এ ছাড়াও, রয়েছে হেলিকপ্টার ও ড্রোনের একটি শক্তিশালী বহর। বিপরীতে, কম্বোডিয়ার বিমানবাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট, যেখানে মাত্র দেড় হাজার সদস্য কাজ করেন এবং যুদ্ধবিমান নেই। তাদের বহরে রয়েছে ১০টি পরিবহণ বিমান, ১০টি হেলিকপ্টার ও ১৬টি মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার, যার মধ্যে কিছু সোভিয়েত যুগের মি-১৭ এবং চীনা জেড-৯ হেলিকপ্টার রয়েছে।

নৌবাহিনীর দিক থেকেও থাইল্যান্ড বেশ শক্তিশালী। দেশটির নৌবাহিনীতে প্রায় ৭০ হাজার সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নৌবিমান ইউনিট, মেরিন, উপকূল প্রতিরক্ষা ইউনিট এবং নৌ-সৈন্য। থাইল্যান্ডের বহরে একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, সাতটি ফ্রিগেট, ৬৮টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন অ্যামফিবিয়াস ও ল্যান্ডিং জাহাজ রয়েছে, যেগুলো শতাধিক সৈন্য পরিবহণে সক্ষম। এ ছাড়া মেরিন কোরে রয়েছে ২৩ হাজার সদস্য, যাদের কাছে রয়েছে সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য ভারী অস্ত্র।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার নৌবাহিনী অপেক্ষাকৃত ছোট, যেখানে মাত্র ২ হাজার ৮০০ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন নৌপদাতিক সৈন্য। তাদের বহরে রয়েছে ১৩টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ এবং একটিমাত্র অ্যামফিবিয়াস ল্যান্ডিং ক্রাফট।

সব মিলিয়ে, সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতির দিক থেকে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং সুসংগঠিত। তবে উভয় দেশই বর্তমানে সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে তাদের বাহিনী প্রস্তুত রেখেছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।