পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭ জন শিশু রয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ইরান থেকে বিতাড়িত আফগান অভিবাসী।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে হেরাত প্রদেশে কাবুলগামী একটি যাত্রীবাহী বাস ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। এতে বাসে থাকা সবাই প্রাণ হারান বলে নিশ্চিত করেছেন তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
হেরাত প্রদেশের তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আহমাদুল্লাহ মোত্তাকি বিবিসিকে জানান, বাসের সমস্ত যাত্রী এবং অন্যান্য যানবাহনের আরও দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইউসুফ সাঈদী বলেন, নিহত সবাই আফগান অভিবাসী ছিলেন। তারা ইসলাম কালা সীমান্ত শহর থেকে বাসে উঠেছিলেন। এএফপিকে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার শিকার বাসটি ইরান থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের বহন করছিল।
হেরাত প্রাদেশিক পুলিশ দুর্ঘটনার জন্য বাস চালকের অতিরিক্ত গতি ও অবহেলাকে দায়ী করেছে। আফগানিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত ঘটনা, যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত, আর যানবাহন চালনার নিয়ম-কানুন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে।
ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থানরত আফগান অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে বহিষ্কার করছে। দেশটিতে আফগান-বিরোধী মনোভাবও বাড়ছে, ফলে শরণার্থীরা নানা ধরনের বৈষম্যের মুখে পড়ছে। আগে ইরান অবৈধ অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য জুলাই মাস পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
তবে চলতি বছরের জুনে ‘ইসরায়েল’-এর সঙ্গে সীমিত যুদ্ধের পর ইরানি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ব্যাপক হারে আফগানদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠাতে শুরু করে। সমালোচকরা বলছেন, ‘ইসরায়েল’-এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যর্থতা ঢাকতে ইরান সরকার আফগানদের বলির পাঁঠা বানাচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ লাখ আফগানকে ইরান ছাড়তে হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে বহু প্রজন্ম ধরে ইরানে বসবাস করছিলেন।
অথচ আফগানিস্তান বর্তমানে ফেরত আসা এত বিপুল সংখ্যক নাগরিককে গ্রহণ করার সক্ষমতা রাখে না। দেশটি এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো লাখ লাখ শরণার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন আফগানিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরশাদ মালিক এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘এত মানুষের একসঙ্গে ফেরত আসা দেশটির সীমিত সম্পদের উপর মারাত্মক চাপ তৈরি করছে। বিদেশি সাহায্য হ্রাসের কারণে আফগানিস্তান এমনিতেই সংকট মোকাবিলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার উপর শরণার্থীদের এই নতুন ঢেউ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’