জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) টোকিওতে এক যৌথ বৈঠকে তিনি তাকাইচির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অঙ্গীকারকে স্বাগত জানান এবং বাণিজ্য ও বিরল খনিজ খাতে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সই করেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তাকাইচি ছিলেন প্রয়াত জাপানি নেতা শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আবে ট্রাম্পের বন্ধু ও গলফ সঙ্গীও ছিলেন। ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটের তথ্যমতে, তাকাইচি বৈশ্বিক সংকট সমাধানে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দুই দেশের সরকার শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও খনিজ সম্পদ খাতে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও গ্যারান্টি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ট্রাম্প সরকারের শুল্ক নীতির চাপ সামাল দেওয়ার অংশ।
ট্রাম্প তাকাইচিকে উদ্দেশ করে বলেন, শিনজো ও অন্যদের কাছ থেকে যা শুনেছি, তাতে মনে হয় আপনি হবেন মহান প্রধানমন্ত্রীদের একজন। প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যও আপনাকে অভিনন্দন।
বৈঠকে তাকাইচি প্রয়াত আবের স্মৃতি স্মরণ করেন এবং ট্রাম্পকে আবের ব্যবহৃত একটি গলফ পাটার, গলফ ব্যাগ ও সোনার পাতের গলফ বল উপহার দেন। আবে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনি বিজয়ের পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
দুজনের মধ্যে মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের চাল ও গরুর মাংসসহ তাকাইচির নিজ শহর নারা থেকে আনা সবজি। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে একটি মানচিত্র উপহার দেন, যাতে ২০১৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি কোম্পানিগুলোর বড় বিনিয়োগের চিত্র দেখানো হয়। তালিকায় ছিল মিতসুবিশি, সফটব্যাংক, হিতাচি, মুরাতা ম্যানুফ্যাকচারিং ও প্যানাসনিকসহ শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
ট্রাম্প বলেন, টয়োটা যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন গাড়ি কারখানা স্থাপন করবে।
বিরল খনিজ সরবরাহে নতুন চুক্তি
বৈঠকে উভয় নেতা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বিরল খনিজ সরবরাহ জোরদার করার চুক্তিতে সই করেন। চীনের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে এই চুক্তি করা হয়েছে। ট্রাম্প জাপানের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন, আর তাকাইচি তার মধ্যস্থতায় কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতির উদাহরণ টেনে বলেন, এটি ‘অভূতপূর্ব সাফল্য’।
বিকেলে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার অপহৃত নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে আছে।’ তিনি আবারও জানান, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি আগ্রহী।
এরপর ট্রাম্প ও তাকাইচি টোকিওর ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটায় পারমাণবিকচালিত মার্কিন বিমানবাহী রণতরী জর্জ ওয়াশিংটন-এ যান। সেখানে ৬ হাজার মার্কিন নাবিকের সামনে ট্রাম্প এক ঘণ্টার ভাষণে বলেন, এই নারী একজন জয়ী।
তাকাইচিও মার্কিন বাহিনীর ভূমিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এমন এক নতুন অধ্যায় গড়তে চাই, যা দুই দেশকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করবে।’
ট্রাম্প জানান, জাপানের অর্ডার করা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ক্ষেপণাস্ত্র এই সপ্তাহেই সরবরাহ শুরু হবে।
আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে ট্রাম্প মঙ্গলবার টোকিওতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন, যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন