চীনের সামরিক শক্তির অন্যতম আধুনিক সংযোজন হিসেবে পরিচিত ‘জে-১৫ ফ্লাইং শার্ক’। যুদ্ধবিমানটি চীনের বিমানবাহী রণতরীগুলোর অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। চীনা নৌবাহিনীর এই ফাইটার জেটটি মূলত রুশ প্রযুক্তি থেকে উদ্ভূত হলেও দেশীয় উন্নয়নে এটি আজ নিজস্ব পরিচয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত।
নৌবাহিনীর বহরে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিমান
জে-১৫ হলো চীনের প্রথম ‘ক্যারিয়ারভিত্তিক বহুমুখী যুদ্ধবিমান’, যা যুদ্ধকালীন সময়ে নৌবাহিনীর বিমানবাহী জাহাজ থেকে সরাসরি উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম। এটি মূলত রাশিয়ান সু-৩৩ মডেলের ভিত্তিতে তৈরি হলেও এর কাঠামো ও প্রযুক্তিতে চীনের নিজস্ব উন্নয়ন স্পষ্ট।
ক্ষমতা ও বহুমুখী ব্যবহার
দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানটি প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে রয়েছে আধুনিক রাডার সিস্টেম, অত্যাধুনিক বিমান বিধ্বংসী মিসাইল, জাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রিসিশন গাইডেড বোমা।
বিশ্লেষকদের মতে, জে-১৫ একটি ভারী যুদ্ধবিমান হলেও তা থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য অস্ত্রের বহর উল্লেখযোগ্য। এটি একইসঙ্গে আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পাশাপাশি সমুদ্রভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে সক্ষম।
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আধিপত্য বজায়
ফাইটার জেট জে-১৫ এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারী কাঠামো ও ‘স্কি-জাম্প’ প্রযুক্তির কারণে জে-১৫ সম্পূর্ণ লোডে রণতরী থেকে উড্ডয়ন করতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫সি বা এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেটের তুলনায় এটি কম প্রযুক্তিসম্পন্ন হলেও চীনকে নিজেদের অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে বড় সুবিধা দিচ্ছে।
নতুন সংস্করণ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
চীন ইতিমধ্যেই জে-১৫ যুদ্ধবিমানের উন্নত সংস্করণ জে-১৫বি ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সংস্করণ জে-১৫ডি-এর উন্নয়ন শুরু করেছে। পাশাপাশি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ক্যারিয়ার ফাইটার জে-৩৫ নির্মাণও চলছে, যা ভবিষ্যতে জে-১৫-এর জায়গা নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তনের সম্ভাবনায় জে-১৫ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে জে-১৫ এখনো পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে পিছিয়ে, কিন্তু এর কৌশলগত উপস্থিতি অনেক বড় বার্তা বহন করে।