দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন ইউরোপের দেশ লিথুয়ানিয়ার প্রধানমন্ত্রী গিনতাউতাস পালুকাস। এর আগে তার ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে তদন্ত শুরু হলে রাজধানী ভিলনিয়াসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা সংবাদমাধ্যমে পালুকাসের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর পালুকাস নিজেও তার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেন।
গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর তিন-দলীয় জোট সরকার গঠিত হলে পালুকাস প্রধানমন্ত্রী হন। তার পদত্যাগে পুরো মন্ত্রিসভাই ভেঙে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিগগিরই নতুন সরকার গঠনের আলোচনাও শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী পালুকাস একাধিক ব্যবসায়িক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ২০১২ সালে ভিলনিয়াস শহরের ইঁদুর নিধন কার্যক্রমের দরপত্রে অনিয়ম। সে সময় তিনি ছিলেন শহরের পৌর প্রশাসনের পরিচালক।
আদালত রায় দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সর্বোচ্চ দরদাতা কোম্পানিকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ১৬ হাজার ৫০০ ইউরো (প্রায় ১৯ হাজার ডলার) জরিমানা করা হয়, যার একটি বড় অংশ তিনি এখনো পরিশোধ করেননি।
রায় অনুযায়ী তার দুই বছরের কারাদণ্ড হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে কারাগারে যেতে হয়নি।
সাম্প্রতিক মিডিয়া তদন্তে বিষয়টি ফের প্রকাশ্যে এলে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নতুন করে তদন্ত শুরু করে। পালুকাস অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের একটি সমন্বিত ষড়যন্ত্র।’
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এমন এক সময়ে এলো, যখন লিথুয়ানিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ রাশিয়া ও বেলারুশ একটি যৌথ সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
গত মে মাসে লিথুয়ানিয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বেলারুশের বিরুদ্ধে মামলা করে, অভিযোগ করে যে বেলারুশ ‘অবৈধ অভিবাসন’ প্ররোচিত করছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়া ১৯৯০ সালে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তা বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে দেশটি ন্যাটো সদস্যভুক্ত এবং ইউক্রেনের সমর্থক।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট নাউসেদা দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে সতর্ক করে আসছেন এবং তার সরকার ইউক্রেনের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন জানিয়ে আসছে।