বাংলার কৃষির ইতিহাসে পাট এক গর্বের নাম। এক সময় এ দেশের অর্থনীতিকে চালিত করত সোনালি আঁশ, যার সুনাম ছিল বিশ্বজুড়ে। আবারও পাটের কদর বাড়ছে দেশ-বিদেশে, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উপাদান হিসেবে। কিন্তু ভালো দাম আর উন্নত গুণমানের আঁশ পেতে চাইলে সঠিক পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে হবে। একটু যত্ন আর সময় জ্ঞানই পারে আপনার উৎপাদিত পাটকে সোনালি আঁশে পরিণত করতে।
তাই চলুন জেনে নিই, কীভাবে পাট জাগ দিলে ভালো আঁশ পাওয়া সম্ভব-
১. সঠিক সময় ও পাতা ঝরানো
পাট কাটার উপযুক্ত সময় হলো ফুল আসার পরপর, যখন গাছের নিচের পাতা হলদে হয়ে ঝরতে শুরু করে। পাতা ঝরে গেলে আঁশ বেশি পরিষ্কার হয় এবং গন্ধও কম হয়।
২. আঁশ ছাড়ানো পদ্ধতি
গাছ কাটার পর গাছগুলো ৩–৪ দিন ধরে ছায়ায় রাখলে পাতা ঝরে পড়ে এবং জাগ দেওয়ার জন্য গাছ প্রস্তুত হয়। এরপর গাছগুলো আঁশ ছাড়ানোর জন্য একসঙ্গে বেঁধে পানিতে জাগ দিতে হয়।
৩. উপযুক্ত পানির নির্বাচন
পাট জাগ দেওয়ার জন্য পরিষ্কার, চলমান এবং কমজ্বলা পানি নির্বাচন করুন। জলাবদ্ধতা বা নোংরা পানিতে জাগ দিলে আঁশের রঙ ও গুণমান খারাপ হয়।
৪. পাট জাগ দেওয়ার সময়সীমা
সাধারণত ১০–১৫ দিন পর্যন্ত জাগানো হয়। তবে পানি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সময় কম-বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত সময় জাগালে আঁশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫. চাপা দেওয়ার পদ্ধতি
পানি ভর্তি গর্তে বা পুকুরে গাছগুলো উল্টো করে ডুবিয়ে রাখা হয়। ওপর থেকে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে চেপে ধরা হয় যাতে গাছ পানির নিচে থাকে। কখনো কখনো উপরে কলাগাছ বা কচুরিপানা চাপা দেওয়া হয় যাতে গাছগুলো ঠিকভাবে ডুবে থাকে।
৬. আঁশ ছাড়ানো ও ধোয়া
সঠিক সময় পার হলে আঁশ আলাদা করে ছাড়িয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে শুকানোর জন্য মেলে দিতে হয়। ছায়াযুক্ত জায়গায় রোদে শুকানো ভালো, এতে রঙ ও গুণমান ঠিক থাকে।
৭. ভালোভাবে শুকানো
আঁশ পুরোপুরি শুকানো না হলে পচে যেতে পারে। রোদে শুকানোর পর শুকনো আঁশ পরিষ্কার করে বেঁধে রাখা হয়।
অতিরিক্ত টিপস
গাছ কেটে ৪৮ ঘণ্টার বেশি দেরি না করে জাগ দিন।
একই সঙ্গে সব গাছ জাগ না দিয়ে ব্যাচ করে দিন, এতে কোয়ালিটি ভালো থাকে।
আঁশ ছাড়ানোর পর গন্ধ থাকলে তা পানির কারণে হয়েছে ধরে নিন—পরবর্তী বছর পানি পরিবর্তন করুন।
বাজারে ভালো দাম পাওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি হলো সঠিকভাবে জাগ দেওয়া ও আঁশ প্রক্রিয়াজাত করা। তাই প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক পরামর্শ মেনে চলুন, আপনার পরিশ্রমের সেরা মূল্য পাবেন নিশ্চয়ই।