মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পোনা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক পোনা সংরক্ষণ নিশ্চিত করলে মাছের প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে মাছের সংরক্ষণের হার বেড়ে যায় এবং চাষিদের আয়ও বেড়ে যাবে। তাই মাছ চাষ, প্রজনন নিরাপদের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি।
জেনে নিন পোনা সংরক্ষণের পদ্ধতি-
১. পোনা সংগ্রহ ও বাছাই
পোনা সংগ্রহের সময় রোগমুক্ত ও সুস্থ মাছ নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আকার ও বয়স অনুযায়ী পোনা বাছাই করলে প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া সহজ হয়।
পোনা সংগ্রহের সময় অতিরিক্ত চাপ ও আঘাত এড়াতে বিশেষ নেট ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
২. পানির মান নিয়ন্ত্রণ
সংরক্ষণের জন্য পানির তাপমাত্রা, পিএইচ মান ও দ্রবীভূত অক্সিজেন পর্যবেক্ষণ করা অত্যাবশ্যক।
পানি পর্যাপ্তভাবে হালকা ও স্বচ্ছ রাখতে হবে।
পোনার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হাওয়াজনিত যন্ত্র ব্যবহার করা যায়।
সংরক্ষণের আগে পানি জীবাণুমুক্ত করা হলে রোগের ঝুঁকি কমে।
৩. পোনা স্থানান্তর ও মানিয়ে নেওয়া
দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের আগে পোনাকে ধীরে ধীরে নতুন জলাশয়ে মানিয়ে নিতে হবে।
স্থানান্তরের সময় তীব্র সূর্য, ঝড় বা হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন এড়ানো প্রয়োজন।
স্থানান্তরের সময় পোনার চাপ কমাতে ও দ্রুত মৃত্যু প্রতিরোধে বিশেষ বস্তা বা প্লাস্টিকের কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়।
৪. রোগ ও জীবাণু থেকে রক্ষা
সংরক্ষণের আগে প্রয়োজনে পোনাকে ওষুধ বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিচর্যা করা হয়।
ট্যাংক বা হ্যাচারির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
অন্যান্য মাছের সঙ্গে সংরক্ষণ করলে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, তাই আলাদা রাখা উত্তম।
৫. সঠিক সরঞ্জাম ও পদ্ধতি ব্যবহার
পোনা সংরক্ষণের জন্য ফাইবার গ্লাস বা প্লাস্টিকের ট্যাংক ব্যবহার করা ভালো।
হ্যাচারি বা নেটের মাধ্যমে পোনা আলাদা করা সুবিধাজনক।
সংরক্ষণ কক্ষে আলো ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করলে পোনার বৃদ্ধি ও জীবনধারণ ক্ষমতা উন্নত হয়।
৬. খাদ্য ও পরিচর্যা
সংরক্ষিত পোনাকে পর্যাপ্ত ও সুষম খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন।
পোনার বৃদ্ধি ও সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার প্রদান করা উত্তম।
অতিরিক্ত খাবার দিলে পানি দূষিত হয়, তাই নিয়মিত পরিমাপ অনুযায়ী খাওয়ানো জরুরি।
মাছের পোনা সংরক্ষণ কেবল চাষিদের জন্য নয়, এটি পুরো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলজ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।