ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের পদ্ধতি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ। ছবি- সংগৃহীত

বর্তমানে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশের মৎস্য চাষে একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি। কম জায়গায় কম খরচে অধিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। খাঁচায় মাছ সহজে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করা যায়। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ঝুঁকিও থাকে। মাছের খাবার সরবরাহ, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা ও খাঁচা নিয়মিত পরিষ্কার করার মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের উপকরণ ও প্রস্তুতি-

খাঁচার নির্মাণ

সাধারণত লোহার রড বা বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়।
খাঁচার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নির্ভর করে নদীর গভীরতা ও মাছ চাষের পরিমাণের ওপর।
খাঁচার চারপাশে মশারি বা প্লাস্টিকের জাল লাগানো হয় যাতে মাছ বাইরে না যায় এবং শিকারি মাছ প্রবেশ করতে না পারে।

অবস্থান নির্বাচন

নদীর এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে পানির গতি সঠিক ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে।
পানির গভীরতা সাধারণত ২–৩ মিটার ভালো।
ধুলো ঝড়ে বা প্রবল স্রোতের স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।
সুরক্ষিত ও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

মাছের প্রজাতি নির্বাচন

খাঁচায় সাধারণত দেশীয় এবং বাণিজ্যিক দুটো প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়।

খাঁচা প্রস্তুতি ও স্থাপন

খাঁচা নদীতে স্থাপন করার আগে পানি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
খাঁচার নিচের অংশ নদীর তলদেশ থেকে কিছুটা ওপরে রাখতে হবে যাতে মাছ সহজে শ্বাস নিতে পারে।
খাঁচার চারপাশে সুরক্ষার জন্য জাল লাগানো হয়।

মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া

স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্থ পোনা নির্বাচন করতে হবে।
পোনার ঘনত্ব নির্ভর করে খাঁচার আকারের ওপর, সাধারণত প্রতি ঘনমিটার ২০–৩০টি পোনা ছাড়া হয়।
পোনা ছাড়ার পর মাছের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য ও পরিচর্যা

নিয়মিত মাছের খাবার দেওয়া, যেমন কমার্শিয়াল ফিড বা প্রাকৃতিক খাদ্য।
পানি পরীক্ষা ও পরিমার্জন করা।
রোগ-বালাই প্রতিরোধে সতর্কতা।

পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ

মাছের বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও খাদ্যের প্রতি নজর রাখা।
খাঁচার জাল ও কাঠামো ঠিকমতো রাখা।
পানি পরিবর্তন বা নতুন করে খাঁচার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

খাঁচায় মাছ চাষের সুবিধা

কম জায়গায় বেশি মাছ উৎপাদন।
মাছের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ।
প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
বাজারের চাহিদা অনুসারে দ্রুত উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষ করা সম্ভব।

সতর্কতা ও চ্যালেঞ্জ

নদীর পানির মান হঠাৎ খারাপ হলে মাছের মৃত্যু হতে পারে।
মাছের রোগ ও পরজীবী সমস্যা।
নদীতে প্রবল স্রোত বা বন্যায় খাঁচা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
শিকারি মাছ বা লোকজনের অনুপ্রবেশ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা।