ইতালির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ সিসিলির সংযোগ তৈরি করতে সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন দ্বীপটির বাসিন্দারা। স্থানীয় সময় শনিবার (৯ আগস্ট) সিসিলির মেসিনা শহরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ১ হাজার ৩৫০ কোটি ইউরো (১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার) ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রস্তাবিত ‘স্টেট অব মেসিনা ব্রিজ’ নামক প্রকল্পটির বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, সেতুটি নির্মাণ হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়বে এবং মাফিয়ারা প্রভাব বিস্তার করবে।
১৯৬৯ সাল থেকে বিভিন্ন সরকার মেসিনা ব্রিজ প্রকল্প হাতে নিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ব্যয়ের পরিমাণ, পরিবেশগত ঝুঁকি, নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ ইতালিতে সক্রিয় সিসিলিয়ান ও ক্যালাব্রিয়ান মাফিয়ার হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় বারবার স্থগিত হয়েছে এই প্রকল্প। সবশেষ ২০২৩ সালে ব্রিজটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ইতালির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মেলোনি। চলতি সপ্তাহে ইতালির সরকারের কৌশলগত সরকারি বিনিয়োগসংক্রান্ত তদারকি কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
ইতালির পরিবহনমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি এই পরিকল্পনাকে ‘পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প’ বলে অভিহিত করেছেন। সালভিনি বলেন, এই প্রকল্প বছরে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং তা দক্ষিণ ইতালির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে কয়েকশ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করা হবে। বর্তমানে ফেরিতে করে প্রণালিটি পার হতে সময় লাগে প্রায় ১০০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। আর সেতু হয়ে গেলে গাড়িতে করে পার হতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। সেতু হয়ে গেলে ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রার সময়ও ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট কমবে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হবে। এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সালভিনি ।
মেসিনার ৭৫ বছর বয়সি বাসিন্দা মারিওলিনা দি ফ্রান্সেস্কো বলেন, ‘তারা (সরকার) আমাকে আমার বাড়ির তিন গুণ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারে; কিন্তু আমার তাতে আগ্রহ নেই। আমার কাছে প্রাকৃতিক দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা (সরকার) মেসিনা প্রণালি স্পর্শ করতে পারবে না।’
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, প্রকল্পটি পরিযায়ী পাখিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রস্তাবিত সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার (২ দশমিক ৩ মাইল)। এর মধ্যে ঝুলন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার (২ মাইলের বেশি)। নির্মিত হলে এটি হবে বিশ্বের একক স্প্যান বা সবচেয়ে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু, যার দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো স্তম্ভ (পিলার) থাকবে না। বর্তমানে তুরস্কের ‘চানাক্কালে’ সেতুটি বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার বা ১ হাজার ২৭৭ মিটার।
এ ছাড়া এ প্রকল্প ইতালিকে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। ন্যাটো ইতালিকে এ লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। ইতালির সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা সেতুটিকে প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত করে দেখাবে।