ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইইউ-ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০১:৪১ এএম
ছবি- সংগৃহীত

আটলান্টিক মহাসাগরবেষ্ঠিত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেনকে ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহার করে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। একই সঙ্গে এই যুদ্ধে পশ্চিমারা সরাসরি অংশ নিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক পাবলিক টেলিগ্রাম বোর্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলেন লাভরভ। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা রাশিয়ার প্রতি সরাসরি শত্রুতা। ক্রেমলিন দীর্ঘদিন ধরেই একই দাবি করে আসছে।

ন্যাটো মিত্রদের আকাশসীমায় বারবার ড্রোন আক্রমণের মধ্যেই এ মন্তব্য করলেন লাভরভ। গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া জানিয়েছিল, রুশ যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এর জবাবে মঙ্গলবার ন্যাটো স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেছে, তারা মিত্র অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষায় প্রস্তুত।

চলতি মাসের শুরুতে পোল্যান্ডেও একই ঘটনা ঘটে। মস্কোর প্রায় ২০টি ড্রোন পোলিশ আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এস্তোনিয়ায় নতুন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।

ঠিক এই সপ্তাহে ডেনমার্কও ড্রোন ঘটনার খবর দিয়েছে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে একাধিক ড্রোন দেখা গেছে। একই সময়ে ডেনিশ উপকূলে একটি রুশ অবতরণকারী জাহাজ লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়।

অবশ্য মস্কো উভয় অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটো বলেছেন, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান যদি জোটের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তবে তা গুলি করে ভূপাতিত করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কঠোরভাবে কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে।

এদিকে রাশিয়ার কূটনীতিক আলেকসেই মেশকভ বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের আরটিএল রেডিও-কে বলেন, ন্যাটো যদি রাশিয়ার কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে তবে তার পরিণতি হবে যুদ্ধ।

মেশকভের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায়ই দেখা যায় ন্যাটো সামরিক বিমান অনিচ্ছাকৃতভাবে বা দুর্ঘটনাক্রমে রাশিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদের গুলি করে নামানো হয় না।

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের অভিযোগ প্রমাণে কোনো ‘বস্তুনিষ্ঠ’ তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।

বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও একই সুরে কথা বলেন। তিনি এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রুশ যুদ্ধবিমান প্রবেশের দাবিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উড়িয়ে দেন। তার ভাষায়, এসব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অবাস্তব’।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান কারেলিয়া অঞ্চল থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। এগুলো ফিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল থেকে উড়ে কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের একটি বিমানবন্দরে যাচ্ছিল। মন্ত্রণালয় জানায়, ফ্লাইটগুলো কেবল বাল্টিক সাগরের নিরপেক্ষ আকাশপথ ব্যবহার করেছে।

এদিকে সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে বক্তব্য দেন পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রাশিয়ার যেকোনো বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র যদি পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে তবে তা ভূপাতিত করা হবে।

গত সপ্তাহে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোভিল সাকালিনে একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি ন্যাটোকে সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার এসব প্রচেষ্টা মূলত তাদের দৃঢ় সংকল্পের পরীক্ষা নেওয়া। তাই জোটকে দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে হবে।

সূত্র: আরটি, নিউজউইক, কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট