ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের ‘প্রস্তুতি’ নিচ্ছে ইইউ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ-প্রস্তুতি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত হতে যাওয়া এক খসড়া সামরিক পরিকল্পনায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই পলিটিকো পর্যালোচনা করেছে।

খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপের এমন এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে, যা প্রতিপক্ষকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে এবং যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে সক্ষম হবে।’

বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে ইইউ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। আর বৃহস্পতিবার এটি ইউরোপীয় কমিশনের কলেজে উপস্থাপন করা হবে। আগামী সপ্তাহে নথিটি পাঠানো হবে ইইউ নেতাদের কাছে অনুমোদনের জন্য।

‘প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি রোডম্যাপ ২০৩০’ মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি। ১৬ পৃষ্ঠার এই নথিতে বলা হয়েছে, ইইউ দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট দ্রুত বাড়ালেও সেই ব্যয় এখনো ‘অতিরিক্তভাবে জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ’, ফলে সমন্বয়হীনতা, ব্যয়বৃদ্ধি এবং আন্তঃকার্যক্ষমতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

কমিশন সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে যৌথ অস্ত্র ক্রয়ে উৎসাহিত করছে। লক্ষ্য হলো, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্রয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ যৌথ চুক্তির আওতায় আনা। বর্তমানে এই হার এক-পঞ্চমাংশেরও কম। আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে ৫৫ শতাংশ, ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অস্ত্র কেনা ইইউ ও ইউক্রেনীয় কোম্পানি থেকে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইইউর রোডম্যাপে নয়টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তা হলো: আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, সামরিক গতিশীলতা, দূরপাল্লার (আর্টিলারি) সিস্টেম, সাইবার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ, ড্রোন ও অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি, স্থল যুদ্ধ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং ‘এনাবলার’ ব্যবস্থা।

এ ছাড়া ইউক্রেনকে ‘ইস্পাত শজারু’ বা এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বলয়ে পরিণত করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে দেশটি রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে টিকে থাকতে পারে।

রোডম্যাপে তিনটি বড় প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তা হলো:

ইস্টার্ন ফ্ল্যাঙ্ক ওয়াচ—বিমান প্রতিরক্ষা ও কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম একীভূত করে পূর্ব ইউরোপ রক্ষায় নতুন ব্যবস্থা।
ইউরোপীয় এয়ার শিল্ড—বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক।
ডিফেন্স স্পেস শিল্ড—ইউরোপের মহাকাশ সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা কাঠামো।

ইইউ আশা করছে, বছরের শেষ নাগাদ এই তিনটি প্রকল্প অনুমোদন পাবে। রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত অর্থায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর এসএএফই প্রোগ্রাম, ১.৫ বিলিয়ন ইউরোর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প কর্মসূচি, ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা তহবিল এবং ২০২৭ সালের পরবর্তী ইইউ বাজেট।

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের সরবরাহ ও শিল্প সক্ষমতা নিশ্চিত করতে একটি শিল্প মানচিত্র তৈরি করার কথাও বলা হয়েছে। তবে ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্প ঐতিহ্যগতভাবে এমন তথ্য ব্রাসেলসের সঙ্গে ভাগ করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এটি বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।

নথিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য সার্বভৌম থাকবে।’ তবে জার্মানি, সুইডেনসহ কয়েকটি দেশ ইইউর সামরিক ভূমিকা বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। জার্মানি বলেছে, ‘প্রস্তুতি রোডম্যাপের লক্ষ্য হওয়া উচিত সদস্য দেশগুলোকে তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সক্ষমতার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা।’

খসড়ায় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মতো অঞ্চল থেকে আসা হুমকি উপেক্ষা করার সামর্থ্য রাখে না।’ রোডম্যাপ ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের ওপরও জোর দিয়েছে। কিছু দেশ আশঙ্কা করছে, ইইউর নতুন সামরিক কাঠামো ন্যাটোর সঙ্গে সমন্বয়হীন হলে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রোডম্যাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইউরোপ এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে ঐতিহ্যগত মিত্ররা (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র) আর সবসময় পাশে থাকবে না।

খসড়ায় সতর্কভাবে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো ক্রমশ ইউরোপের সমাজ ও অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশ্বের অন্যান্য অংশে মিত্রদের মনোযোগ সরে যাচ্ছে... তাই ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’