চীন-পাকিস্তানকে সামরিকভাবে মোকাবেলা এবং নিজেদের কৌশলগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন প্রজন্মের বাঙ্কার বাস্টার বোমার দিকে ঝুঁকছে ভারত। ভূগর্ভস্থ টানেল, কংক্রিটের নিচে পারমাণবিক ঘাঁটি কিংবা সুসজ্জিত বাংকার ধ্বংসের জন্য এই বোমা বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়।
ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঙ্কার বাস্টার তৈরি করছে ভারত। অগ্নি-৫ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের দুইটি ভার্সান তৈরি হচ্ছে দেশটিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এই অগ্নি-পাঁচের নতুন ভার্সন তৈরি করছে। এই অগ্নি-পাঁচ মাটি ৮০ থেকে ১০০ মিটার গভীরে গিয়ে কংক্রিটের আস্তরণ ভেদ করতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে। সাড়ে ৭ হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করে নিয়ে যেতে পারবে এই ক্ষেপণাস্ত্র।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বলেন, ভারতের জন্য অগ্নি পাঁচ শুধু যুদ্ধ নয়, কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। চীন ও পাকিস্তানকে পরোক্ষ বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যেকোনো আঘাতের জবাব সরাসরি ও গভীরভাবে দিতে প্রস্তুত ভারত।
বাঙ্কার বাস্টার কী?
‘বাঙ্কার বাস্টার’ এক ধরনের শক্তিশালী বোমা। যা ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ফেলা হয়। এটি শক্ত কংক্রিট বা ভূগর্ভস্থ রক্ষণশীল স্থাপনা ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত বিখ্যাত বাঙ্কার বাস্টারের মধ্যে রয়েছে— জিবিইউ-২৮ (যুক্তরাষ্ট্র), বিএলইউ-১০৯ (নেটো), রাফাল এসপাইস (ইসরায়েল)।
ভারতের কেন এই অস্ত্র দরকার?
হিমালয় পাড়ি দিয়ে চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ এবং পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্তে ভূগর্ভস্থ অস্ত্রভাণ্ডার ভারতের উদ্বেগের অন্যতম উৎস।
ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে—লাদাখ সীমান্তে চীন ভূগর্ভস্থ সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ও মিসাইল রাখা হচ্ছে।
২০১৯ সালের বালাকোট স্ট্রাইকে পাকিস্তানের জইশ-ই-মোহাম্মদের ক্যাম্প ধ্বংস করার দাবি করে ভারত, কিন্তু লক্ষ্যবস্তুর অধিকাংশ ছিল বাংকারে, যা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এ ব্যর্থতা ভারতকে শিখিয়েছে ভূগর্ভস্থ শত্রু অবস্থান ধ্বংসে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন।
ডিআরডিও-এর নতুন মিশন
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও ইতিমধ্যেই ‘গৌরব’ ও ‘গরুড়’ নামের দুটি বাংকার ভেদকারী বোমা উন্নয়ন করছে। এগুলো এক টন ওজনের এবং ভূগর্ভে কয়েক মিটার ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।তবে ভারত চায় আমেরিকা বা ইসরায়েলের মতো নিজস্ব বাঙ্কার বাস্টার প্রযুক্তি, যাতে অস্ত্র আমদানির উপর নির্ভরশীল না হতে হয়।
‘নিউক্লিয়ার ফার্স্ট স্ট্রাইক’ নীতির শঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বা পাকিস্তান যদি কখনো পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, তবে তাদের পারমাণবিক শেল্টার ধ্বংসে প্রথম পর্যায়ের অস্ত্র হিসেবে বাঙ্কার বাস্টার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য
চীন ইতিমধ্যে ডিএফ-১৫বি ও ওয়াইজে-১৮ বি নামের বাংকার বাস্টার মিসাইল তৈরি করেছে। পাকিস্তানেরও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা নির্দিষ্ট অবস্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। এর বিপরীতে ভারতে নিজস্ব উচ্চ-পারফরম্যান্স বাংকার বাস্টার না থাকলে কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।