ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক, বাংলাদেশের রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশসহ কমপক্ষে ৯০টি দেশের জন্য নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে দেশভেদে ৪১ থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। দর কষাকষির পর বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯ শতাংশ শুল্ক হার নিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। নতুন ঘোষিত রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ (পারস্পরিক শুল্ক) তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ কমপক্ষে ৫০টির বেশি দেশের পণ্যে ভারতের তুলনায় কম শুল্ক ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার পর ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তি না থাকলেও ঢাকার পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বাজারে ভারতের বড় প্রতিযোগী। ঘোষিত নতুন শুল্ক হার আগামী ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী যেসব দেশ পণ্য রপ্তানি করে তাদের মধ্যে ভারত অন্যতম। সম্প্রতি নয়াদিল্লির ওপর ঢাকার চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপের কারণে ভারতীয় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যাতে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ, যদিও দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, পাকিস্তানের তেল মজুত খাতে দুই দেশ একসঙ্গে ব্যাপকভাবে কাজ করবে।

এ ছাড়া ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন (প্রতিটি ১৯ শতাংশ) হচ্ছে আসিয়ানভুক্ত দেশ, যাদেরকেও ভারতের তুলনায় কম শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস খাতে এসব দেশের প্রবেশাধিকার ভারতের চেয়ে বেশি হতে পারে। 

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পণ্যে কম শুল্ক বসানো হলে ভারতের তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার জন্য অনুকূল শুল্ক কাঠামো ভারতের দ্রুত বিকাশমান অ-চামড়াজাত জুতা শিল্প ও ইলেকট্রনিকস খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি আটকে আছে কৃষি ও গাড়ি খাত-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছিল, জেনেটিকালি মোডিফায়েড (জিএম) ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই ভারতের।

কৃষি খাত দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) আগে থেকেই ভারতের জিএম পণ্যে নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করে আসছে। ইউএসটিআর-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট জিএম উৎস থেকে আসা খাদ্যপণ্যের জন্য নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখেছে। তবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই) এখনো চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করেনি।

ভারত মূলত নিজের তৈরি পোশাক, চামড়া এবং জুতা খাতের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার চাইছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজারে প্রবেশ করতে। কিন্তু ছোট চাষিদের প্রাধান্য ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এটি ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ভারত যেন জিএম পণ্যের ওপর থেকেও নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়।